বনেদিবাড়ির পুজোর ইতিহাস

0 0
Read Time:5 Minute, 0 Second

নিউজ ডেস্ক: আজ মহাষষ্ঠী। মায়ের বোধন ছিল আজ। এই পূজা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রীতিনীতি মেনে হয়। বাঙালিয়ানাকে ধরে রাখতে যেসব বনেদিবাড়িগুলি এখনও বিদ্যমান, এই মহাষষ্ঠী উপলক্ষে জেনে নেব সেইসব বনেদি বাড়ির পূজার ইতিহাস।

এদিক দিয়ে সদর হাওড়ার দুর্গোৎসব প্রসঙ্গে বলতে হলে সর্বপ্রথমই আসে ‘আন্দুল রাজবাড়ী’-র পুজোর কথা।জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রাচীন দুর্গোৎসব। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে জমিদার রামলোচন রায় ইংরেজ বড়োলাট ক্লাইভের পরামর্শে এই পূজার সূচনা করেন। জানা যায়, যে,প্রথমবর্ষের পুজোয় উপস্থিত ছিলেন লর্ড ক্লাইভ স্বয়ং। তিনি দেবীর পাদপদ্মে ১০৮ টি পদ্ম ও ১ হাজার টাকা প্রণামী নিবেদন করেন।

রীতি মেনে বনেদি বাড়ির পুজো

অপরদিকে আন্দুলের কুন্ডু চৌধুরী বাড়ির পুজোও জেলার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসব হিসাবে বিবেচিত হয়। তৎকালীন সময়ে জমিদার ও ব্যাবসায়ীদের অন্যতম ব্যবহার্য উপাদান ছিল ‘নৌকা’।মৃন্ময়ী মূর্তির আরাধনার সাথে ‘নৌকা’-কে পুজো করা হত। এই রীতি আজও স্বমহিমায় অটুট রয়েছে।

এরপরেই এসে যায় বেলুড় মঠের দুর্গাপূজার কথা। বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত মানুষ ছুটে আসেন যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ প্রবর্তিত এই দুর্গাপূজায় যোগদানের উদ্দেশ্যে। এই পূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তথা আকর্ষণ অষ্টমীতিথিতে ‘কুমারী পূজা’।স্বামীজি মানুষের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন পরম ঈশ্বরকে। তাই তিনি ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র সঙ্গে সঙ্গে সমাজের মাতৃরূপা নারীশক্তির আরাধনা করতে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম “কুমারী পূজা” চালু করেছিলেন।প্রসঙ্গক্রমে জানা গিয়েছে,স্বামীজি সর্বপ্রথম ‘কুমারী’ হিসাবে পূজা করেছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধু তথা আমতার ভূমিপুত্র মন্মথনাথ ভট্টাচার্যের কন্যাকে। যদিও এটি বেলুড়ে না মাদ্রাজে সেটা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েই গিয়েছে।

কুমারী পূজা

আবার ১৬৮৫ খ্রিস্টাব্দে শিবপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো শুরু হয় রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরীর হাত ধরে।এই পরিবারের কুলদেবতা হলেন ‘ব্যাতাইচন্ডী’।ব্যাতাইচন্ডীর মুকুট খুলে এনে মা দুর্গার মাথায় পরানো হয়।

প্রখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ির পুজোও প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন। এই বনেদি পরিবারের পুজো শুরু হয়েছিল জমিদার রাধামোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। পুলক বাবুর হাত ধরে সালকিয়ার প্রাচীন এই দুর্গোৎসব এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছায়। পুজোয় বসত গানের আসর। মান্না দে,উত্তম কুমারের ন্যায় সংস্কৃতি জগতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্বরা আসতেন পুজোয় আসর জমাতে।প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে ছাচি কুমড়ো,পান্তা ভাত,মুসুর ডাল,ল্যাটা মাছ পোড়া ভোগ দেওয়া হয় মায়ের কাছে যা এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

পরম্পরায় মহাদেবও উপস্থিত মা’য়ের সহিত

এরকমভাবেই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে বনেদি বাড়ির পুজো। রীতি, ঐতিহ্য, পরম্পরার আঙ্গিকে মোরা পূজাগুলি থিম পুজোর পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে দাপট। করোনাও এতটুকু টলাতে পারেনি তাদের। কিছু নিয়ম-কানুনে বাধানিষেধ পড়লেও, কড়পনতা নেই মায়ের পুজোয়। বোধন থেকে বিজয়া পুরোদমে হবে মা’য়ের সেবা। সেরকমই পন নিয়েছে বনেদি বাড়ির কুলপতিরা।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!