দুই মাসের শিশুর হার্টে ৫ ঘণ্টা ধরে জটিল অস্ত্রোপচার
নিউজ ডেস্ক মাত্র দুই মাস আগে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর হাসপাতালে জন্ম হয় সায়ন মণ্ডলের। তবে, সদ্যোজাতের জন্মের পরেই ধরা পড়ে এক জটিল সমস্যা। ছোট্ট সায়নের হার্টে একাধিক জন্মগত ত্রুটি ধরা পড়ে। জানা যায়, ছোট্ট ছেলেটার হার্টের দুটি নিলয়ের মাঝখানে ছিদ্র রয়েছে। এ ছাড়াও সায়নের হার্টের মূল ধমনীটিও ছিল অপরিণত ও সংকীর্ণ। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম টসিগ বিং অ্যানোম্যালি। গত বুধবার সাড়ে তিন কেজি ওজনের সায়নের হার্টে এক অত্যন্ত কঠিন অপারেশন সফল হল এনআরএস হাসপাতালে। সফল এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় কার্যত এক নজির গড়ল এনআরএস হাসপাতাল।
শিশু সাথী প্রকল্পের মাধ্যমে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি করা হয় সায়নকে। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এনআরএসের এসএনসিইউতেই ভর্তি রাখা হয় সায়নকে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অভিজ্ঞ কার্ডিওথোরাসিক সার্জেন চিকিৎসক পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন। এত ছোট শিশুর অস্ত্রোপচার করা এমনিতেই খুব কঠিন। প্রথমত জটিল এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। কিন্তু খুব দ্রুত অস্ত্রোপচার না করা গেলে ছোট্ট সায়নকে বাঁচানো সম্ভব হত কি না বলা মুশকিল। তাই আর দেরি করেননি চিকিৎসক পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিন কিলো ওজনের ছোট্ট শিশুকে অজ্ঞান করার কাজ খুবই কঠিন। কারণ, যে কোনও মুহূর্তে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেই সব চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে আত্মবিশ্বাসের উপর ভরসা রেখে অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শম্পা দত্তগুপ্ত সেই ঝুঁকি নিতে রাজি হলেন । ১৩ই এপ্রিল চিকিৎসক শম্পা দত্তগুপ্তর নেতৃত্বে অ্যানাসথেটিস্টদের টিম ও চিকিৎশক বিজয় আগরওয়ালের নেতৃত্বে ইন্টেন্সিভিস্ট ও কার্ডিওলজিস্টদের টিম শুরু করেন এই জটিল অস্ত্রোপচার। সঙ্গে ছিলেন প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান ও নার্সরাও। শুধু হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা নয়, সেই সঙ্গে সায়নের অপরিণত মহাধমনীটিও গঠন ও নির্মাণ করা হল। কোথাও বোভাইন প্যাচ দিয়ে, আর কোথাও শিশুর নিজের দেহের কোষ দিয়ে।
আরও একটি জটিল কাজ করা অস্ত্রোপচারের সময়। তা হল সায়নের মহা ধমনী ও পালমোনারি আর্টেরির স্থানান্তর। যার নাম আরটেরিয়াল সুইচ প্রসিডিওর। এত ছোট শিশুর হার্টে এত জটিল অপারেশন এর আগে কখনও পশ্চিমবঙ্গের কোনও সরকারি হাসপাতালে হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচরা। অপারেশনের পরে সায়নের পরিস্থিতি দেখে খুশি চিকিৎসকরা।