জগন্নাথ মন্দিরের অস্বাভাবিকতা এবং লোকবিশ্বাস
শাশ্বতী চ্যাটার্জি::জগন্নাথ মন্দিরের ওপরের অংশটিতে রত্নমূর নামের একটি বৃহৎ অদ্ভুত চৌম্বক শক্তি রয়েছে, যেটি মন্দিরটিকে যে কোনোরকমের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে বলে মনে করা হয়।
কথিত আছে, মন্দিরের উপর দিয়ে কিছু যেতে পারে না। কোনো পাখিকেও কখনো মন্দিরের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়নি।
এমনটা শোনা যায় যে, সূর্যের অবস্থান যে দিকেই থাকুক, মাটিতে মন্দিরের চূড়ার কোনো ছায়া পরিলক্ষিত হয় না।
পুরীর সমুদ্রের কাছেই স্থাপিত জগন্নাথ মন্দির। কিন্তু মন্দির চত্বরে ঢোকার সাথে সাথেই সমুদ্রের কোনো শব্দ পাওয়া যায় না। এর কারণ হিসেবে ব্রহ্মরা বলে থাকেন, সুভদ্রাদেবী চেয়েছিলেন মন্দিরের ভেতরে যেন সবসময় শান্তি বিরাজ করে, তাই কোনো প্রকার শব্দ মন্দিরের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে না।
মন্দিরের চূড়ায় যে ধ্বজা বা পতাকা রয়েছে, তা প্রতিদিন ভোরে লাগানো হয়। পতাকাটি সবসময় হাওয়ার বিপরীতে উড়তে দেখা যায়।
ভক্তদের বিবৃতি অনুযায়ী রথের কিছু মজার এবং আশ্চর্য করা তথ্য রয়েছে। যেমন-
পুরীতে, রথের সময় এমন কোনো বছর নেই যে সময় রথের দিন বৃষ্টি হয়নি।
কোনো রকম আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াই রথ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সময়ের এত উন্নত প্রযুক্তির বিন্দুমাত্র সহায়তা নেওয়া হয় না রথ নির্মাণে।
রথ নির্মাণের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য মাপগুলো হাতে নেওয়া হয়, কোনো গজ ফিতের সাহায্যে নয়। কোনো প্রকার পেরেক, নাট বল্টু, ধাতু- কিছুর ব্যবহার নেই এখানে।
প্রায় চৌদ্দশ’ কর্মী রথ নির্মাণ করেন। এখানে কাউকে আলাদা করে নিয়োগ করতে হয় না, কেননা সেই আদিকাল থেকে বংশপরম্পরায় যারা রথ তৈরি করে আসছিলো, তারা আজও রথ তৈরি করে যাচ্ছে।
রথ তিনটিতে বলরাম, সুভদ্রা এবং জগন্নাথের মূর্তি থাকে ভেতরে, যা নিমকাঠ দিয়ে তৈরি এবং প্রায় ২০৮ কেজি সোনা দিয়ে সজ্জিত।
রথ নির্মাণে যে সমস্ত কাঠ ব্যবহার করা হয়, তার উৎস হলো পুরীর কাছেই দাশপাল্লা ও রানাপুর নামের দুটি জঙ্গল। যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার দ্বিগুণ পরিমাণ গাছ প্রতি বছর রোপণও করা হয় জঙ্গলে।
এই ছিল রথযাত্রাকে ঘিরে সকল লোকবিশ্বাস বা পুরাণে বর্ণিত পবিত্র গাথা। পুরী ছাড়াও বিশ্বের অনেক হিন্দু এলাকাতেই রথ উৎসব পালন করা হয়। যেমন, নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, লাওস সহ বাংলাদেশেও রথ উদযাপন হতে দেখা যায়। যেমন বাংলাদেশের সাভারের ধামরাইয়ে। এখানে প্রতি বছর ধুমধাম করে পালন করা হয় যশোমাধবের রথযাত্রা। এছাড়া, টাংগাইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ইত্যাদি জেলাতেও বড় করে পালিত হয় রথযাত্রা। এতে অংশ নেয় ধারেকাছের গ্রাম, উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এবং উপভোগ করতে আসে সকল ধর্মের মানুষই। রথকে কেন্দ্র করে চমৎকার মেলা বসে বিভিন্ন স্থানে। রথের সাথে কলা বেচা ও লটকনের বিশেষ সম্পর্ক আছে। তাই প্রচুর কলা ও লটকন কেনাবেচা হয় রথে। শুকনা খাবার, যেমন- খই, মুড়ি-মুড়কি, চিরা ভাজা, জিলাপী, আমিত্তি ইত্যাদি মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। শুধু এগুলোই নয়, হাতে তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, কাপরের পুতুল, বাচ্চাদের খেলনা, তৈজসপত্র, কাঠের ঠাকুরঘর আরও নানা রকম সামগ্রীও পাওয়া যায় রথের মেলায়।