নতুন ‘যুগ’ আসছে তৃণমূলে
নিউজ ডেস্ক::একা হয়ে পড়ছেন দিদি!
পাশ থেকে এক এক করে সরে যাচ্ছেন পুরনো দিনের সঙ্গীরা। মুকুল রায় সরেছিলেন। তারপর সরলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এখন মমতার পুরনো দিনের সঙ্গীদের তালিকায় রয়েছেন একা সুব্রত বক্সি।
প্রশ্ন উঠছে একের পর এক প্রবীণ নেতৃত্বের অপসারণে তৃণমূলে কি শুরু হতে চলেছে নতুন অধ্যায়? নাকি পতনের পথে এগিয়ে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের তৃণমূল? তৃণমূল কোন পতে পা বাড়িয়েছে, তা বলবে ভবিষ্যৎ, আপাতত মনে হচ্ছে তৃণমূলে আসতে চলেছে বিরাট পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের ঢেউয়ে ভেসে যেতে পারে মমতার হাতে তিল তিল করে গড়ে ওঠা সাজানো একটি দল।
১৯৯৮ সালে বাংলায় তৃণমূলের উত্থান শুরু হল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে যে বোঝাত তাঁরা হলেন মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সি। তিনজনকে চোখ বুজিয়ে ভরসা করতে পারতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনওদিন তিনজনের কাজে এবং কথায় তেমন হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
কিন্তু ২০১৬-র নির্বাচনের পর তৃণমূলে অভিষেকের উত্থানের পথ ধরে মমতার বিশ্বস্ত টিমে ভাঙন ধরতে শুরু করে। মুকুল রায় পিছু হটতে শুরু করেন ক্রমশ। শেষমেশ ২০১৭-য় তৃণমূলে গুরুত্ব হারিয়ে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। বিজেপিতে তিনি তিনবছর ছিলেন। কেন্দ্রীয় সহসভাপতিও হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও গুরুত্ব হারাতে থাকায় শেষমেশ তৃণমূলে ফেরেন মুকুল। কিন্তু তৃণমূলে ফিরেও তিনি সক্রিয় হননি। পত্নী-বিয়োগের পর অসুস্থতার জেরে তিনি রয়ে গিয়েছেন পিছনের সারিতেই।
এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফেঁসেছেন বিরাট দুর্নীতিতে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তিনি ইডি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বাড়ি ও ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছে কোটি কোটি টাকা, গয়না ও সম্পত্তির হদিশ। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তিনি এই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না। তাই তৃণমূল তাঁকে সমস্ত পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে, তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিত্ব থেকেও তিনি অপসারিত হয়েছেন।
এই অবস্থায় মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা নেতাদের মধ্যে এখন শুধু রয়েছেন সুব্রত বক্সি। পুরনো সৈনিকরা বিভিন্ন কারণে সরে যাওয়ায় তৃণমূলে ক্ষমতার বিন্যাসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেকটাই পাওয়ারফুল মনে হচ্ছে। যেভাবে দলের কাছে অভিযোগ বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমিকা নিচ্ছেন এবং বর্তমানে মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাসদের সাইড করে নিজের গ্রিপে রাখছেন দলকে, তা তৃণমূলের অন্দরে ভিন্ন সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত করছে।
২০২১-এর আগে থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলে এমন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল যে, তিনিই দলের সর্বেসর্বা হয়ে উঠছেন ক্রমশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেও অভিষেক হয়ে উঠছিলেন দলে আক্ষরিক অর্থেই সেকেন্ড ম্যান। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা মহল তো বলতে শুরু করেছিল এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই উঠতে চলছে দলের কর্তৃত্ব ভার।
শুভেন্দু অধিকারী দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে সেই সমীকরণ স্পষ্ট করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সির তত্ত্ববধানে ছিল, ততদিন ঠিকঠাক চলছিল। এখন ভাইপো ও পিকের তত্ত্বাবধানে দল পরিণত হয়েছে কোম্পানিতে। অবশ্য পরবর্তী সময়ে পিকে প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে পিসি-ভাইপোর কোম্পানি বলেই অভিহিত করেন তিনি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘অধঃপতনে’র পর তৃণমূলের আবার অভিষেকের কর্তৃত্ব বেশি করে নজরে পড়ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, যাবতীয় পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করতে দেখা যাচ্ছে অভিষেককেই। তৃণমূলে ৬০ অনুর্ধ্ব নেতা-নেত্রীদেরই দেখা যাচ্ছে নতুন টিমে। তাও প্রবীণদের ক্রমশ পথ প্রদর্শকের পথে ঠেলে দিয়ে নতুনরূপে তৃণমূলকে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। এবং নতুন অধ্যায়ের সুচনায় পুনর্জন্ম দেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেড।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে থাকছেন আড়ালে। তৃণমূলে আসতে চলেছে বিরাট পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের পথ কতটা মসৃণ হয়, তা দেখার জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকেই। আর দেখতে হবে, রাজ্যের শাসক দলে এই বিরাট পরিবর্তনের আবহে বাংলায় বিরোধী দলগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে কি না।