কেরলে চোখ রাঙাচ্ছে বর্ষা
নিউজ ডেস্ক::শক্তিশালী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কেরলে আরও একবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
এর সঙ্গে আবার রবিবার থেকে যোগ হতে পারে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ, যা এই বৃষ্টিপাতকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। রাজ্যের পরিস্থিতি বেশ বিপজ্জনক, বিশেষ করে মধ্য কেরলে, যেখানে নদীগুলির জল স্ফীত হয়ে বেশ কয়েকটি নীচু এলাকা পলাবিত করতে শুরু করে দিয়েছে।
২০১৮ সালের ভয়াবহ বন্যার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে রাজ্যের। আর তাই মধ্য কেরলের প্রশাসন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই কড়া পদক্ষেপ করতে শুরু করে দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে এসে ত্রাণ শিবিরে রাখছে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বৃষ্টি-সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় তিনজন মানুষের প্রাণ গিয়েছে, গত পাঁচদিনে এই নিয়ে পাঁচজন মারা গিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দোসর রাজ্যের নদীগুলির জলস্তর ভরে যাওয়া ও জল উপচে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পর ৬,৪১১ জন মানুষকে উদ্ধার করে ২২১টি ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তর করা হয়। পারম্বিকুলম এবং থুনক্কাদাভু বাঁধ থেকে পোরিঙ্গালকুথু বাঁধে জল ছাড়ার ফলে ছলককুড়ি নদীর অনেক জায়গায় তীর ভেঙ্গেছে, ত্রিশুর এবং এর্নাকুলামের জেলা প্রশাসনকে নদীর তীর থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে।
ছলককুড়ি নদীর জলের প্রবাহ রাতের মধ্যে শক্তিশালী হয়ে উঠবে কারণ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে তামিলনাড়ুর শোলেয়ার থেকে কেরলের শোলেয়ার বাঁধের জলের প্রবাহ বাড়ার পর কেরল শোলেয়ার বাঁধের জল বিকেল ৩টে নাগাদ খুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই কেরলের জলসম্পদ মন্ত্রী রোশি অগাস্টিন তামিলনাড়ুতে তাঁর প্রতিপক্ষ এস. দুরাইমুরুগানকে চিঠি লিখে ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভারী বৃষ্টিরল পরে মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ থেকে জল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
পঠনমতিথার অঙ্গামুঝি-বান্দিপেরিয়ার রুটের পাশাপাশি কোট্টিকালের নিকট কদুঙ্গা, ওয়াগামন ও আরনামুদি থেকে ধসের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। বন্যার জল পম্পা নদীর মাধ্যমে ঢুকে এসে তা আরয়ঞ্জিলিমনের উঁচু ফিটপাতগুলিতে উঠে গিয়েছে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এ ধরনের ঘটনা ঘটল। এর কিছুদিন আগেই পেরুমতিনারুভি জলপ্রপাতের জলে কুরুবানমুঝির ফুটপাতগুলি ডুবে গিয়েছিল। গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সবরীমালার নীরপুথারি উদযাপনে যোগ দিতে পম্পা-ত্রিবেণী বেস ক্যাম্পে পৌঁছে যাওয়া ভক্তদের শুক্রবার বিকেল ৩টের পরে পবিত্র পাহাড়ে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন দুর্বল এলাকায় বসবাসকারীদের অনুরোধ করেছেন যে তাঁরা যেন নিরাপদ জায়গায় সরে যায়। ২০১৮ সালের বন্যা কবলিত এলাকাগুলি থেকে মানুষকে যত শীঘ্র সম্ভব সরে যেতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে ত্রিসূর ও এর্নাকুলম জেলার নীচু-এলাকায় বসবাসকারীদের শিবিরে চলে যেতে বলার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কারণ কেরল এবং লাক্ষাদ্বীপের উপকূলে ৪০-৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের পর রাজ্যের বিপর্যয় সামলাতে জাতীয় বিপর্যয় প্রতিক্রিয়া বাহিনী (এনডিআরএফ)-এর ৯টি টিম ইতমধ্যে রাজ্যের একাধিক অংশে মোতায়েন করা হয়েছে এবং রাজ্য জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) এবং প্রতিরক্ষা সুরক্ষা কর্পস থেকে দুটি দল এবং সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর একটি কলাম চেয়েছে। ত্রিশূর, পথনমতিথা, ইদুক্কি, কোট্টায়াম, আলেপ্পা, পালাক্কাদ ও ওয়েনাদের কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আইএমডির আবহাওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, ইদুক্কি, কোঝিকোড়ে, ওয়েনাদ, কান্নুর ও কাসারাগড় এই পাঁচ রাজ্যে শুক্রবার কমলা সর্তকতা জারি করা হয়। মনে করা হচ্ছে রবিবার থেকে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের ফলে উত্তর কেরল ও ঘাট এলাকাগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। এরই মধ্যে কোল্লামের আরায়ানকাভু ও ইডুক্কির পেরুমেদু এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৪ সেন্টিমিটার হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় এই বৃষ্টি থামে।