পঞ্চায়েত ভোটের মুখে মুর্শিদাবাদে ‘নাটক’ তৃণমূলে

0 0
Read Time:6 Minute, 24 Second

নিউজ ডেস্ক::বাংলায় আবাস যোজনায় ঘোরতর দুর্নীতি হয়েছে, কার্যত তা স্বীকার করে তৃণমূল পরিচালিত মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের মালিহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ ১৭ জন সদস্য ইস্তফা দিয়েছিলেন। চার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নাটকীয় মোড় নিল এই ইস্তফা-কাণ্ড।

১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন পদত্যাগপত্র থেনে নাম প্রত্যাহারের ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। যদিও প্রধান, উপপ্রধান-সহ বাকি ৬জন নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। উল্লেখ্য, শনিবার পঞ্চায়েতের ১৭ সদস্য পদত্যাগপত্র দাখিল করেন ভরতলপুর ২ নম্বর ব্লকে। কিন্তু পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে তা গৃহীত হয়নি।

জেলা তৃণমূলের একাংশের মতে এই পদত্যাগের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় বিধায়ক ও তৃণমূল ব্লক সভাপতি গোষ্ঠীকোন্দল। দীর্ঘদিন ধরেই ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে ব্লক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের গোষ্ঠীকোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে বিধায়কের নির্দেশেই গণইস্তফা দিতে যান ১৭ জন পঞ্চায়েত সদস্য।

এরপর ১১ জন সদস্য যে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিতে চাইছেন, তার পিছনে রয়েছে ব্লক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমানের হাত। জেলা নেতৃত্বের তরফে তাঁকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করতে। শনিবার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা বলে মঙ্গলবার পর্যন্ত পদত্যাগীদের সময় দিয়েছেন বিডিও।

ভরতপুর দু-নম্বর ব্লকের বিডিও বলেন, পঞ্চায়েত সদস্যদের পদত্যাগ করতে হলে সচিবের মাধ্যমে সচিত্র পরিচয়পত্র ও শংসাপচত্র-সহ জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ওই নিয়ম মানা হলে তবেই ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে। জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়ন্ত দাস বলেন, যা হয়েছে সবই নাটক। আর বিজেপি নেতা বলেন, আবাস যোজনায় গোটা জেলাজুড়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সেই দুর্নীতি ঢাকতেই আইওয়াশের চেষ্টা চলছে।

অভিযোগ, আবাস যোজনার ঘরের তালিকা থেকে মাটির বাড়ি আছে এমন প্রাপকদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। রবিবার সালারের মালিহাটী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সৈয়দ নাসিরুদ্দিন জানান, আমাদের প্রত্যেক পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে আলোচনা হবে। আলোচনার ভিত্তিতে অসহায় মানুষ যদি বঞ্চিত তাকেন, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনড় থাকব সিদ্ধান্তে।

তিনি বলেন, যাঁরা ত্রিপল ঘিরে আছেন, তাঁদের যদি ঘর না দেওয়া হয়, আমি সরে আসব। ইস্তফাপত্র সই-স্বাক্ষর করে বিডিও টেবিলে দিয়ে এসেছি। তবে কোনও ভয় নেই আমরা অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমরা শুধুমাত্র পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে বৈঠক করে আবাস যোজনায় দরিদ্র মানুষের নাম যাতে বাদ না যায় তার জন্য এই ইস্তফা দিয়েছি, সাফ জানান সৈয়দ নাসিরুদ্দিন।

যদিও ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির জানান, এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা। পঞ্চায়েত সদস্যদের এই ধরনের পদত্যাগপত্র ত্রুটি যুক্ত। একটা কাগজে যারা স্বাক্ষর করে পদত্যাগ করেছে, তাদের জানা দরকার এভাবে পদত্যাগ মান্যতা পায় না। তাদের সত্যি যদি পদত্যাগের ইচ্ছা থাকত তাহলে বিডিওর কাছে সময় নিয়ে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করত। এরা অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। পঞ্চায়েত রুল সম্পর্কে কোনও ধারনা নেই এদের। জেনে বুঝে এরা ভুল কাজ করেছে। দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই এটা করেছে বলে মন্তব্য করেন হুমায়ুন কবির।

হুমায়ুন কবির এও জানান, এই ধরনের কাজ ঠিক নয়। ছুটির দিনে বিডিও অফিসে গিয়ে পদত্যাগ করে দিলাম। কোনও কারণ দর্শালাম না। এইভাবে কোনও পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় না। জবাবদিহি করে পদত্যাগপত্র দিতে হয়। ছুটির দিনে চিঠি ধরিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়া যায়, পদত্যাগ করা যায় না।

উল্লেখ্য, শনিবার বিডিও অফিসে গিয়ে পদত্যাগ করেন ভরতপুরের মালিহাটি পঞ্চায়েতের সদস্যরা। গণইস্তফাপত্র দেওয়ার পর প্রধান বলেন, গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষেরা ঘর পাননি। মাটির ঘর অথচ তাঁদের নাম নেই তালিকায়। আমরা পদে থেকেও তাঁদের জন্য কিছু করতে পারছি না। সেই কষ্ট বুকে নিয়ে আমরা ইস্তফা দিচ্ছি।

সেইমতো মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর দু-নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মালিহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানসহ ১৭জন সদস্য উপস্থিত হন বিডিও অফিসে। তাঁরা একসঙ্গে গণইস্তফা দেন শনিবার দুপুরে। একদিন পরেই আবার উলটপুরান ঘটিয়ে ১১ জন ইস্তফায় গররাজি হন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!