অন্ধকার ভবিষ্যতে বউবাজার মেট্রো
নিউজ ডেস্ক: নদীর পাড়ের দুই শহরকে মাটির তলা দিয়ে জোড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। কাজ শুরু হয়েছিল ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর। হাওড়ার ময়দানে মাটি র ত্রিশ ফুট নিচে তৈরি হয় মেট্রো স্টেশন। গঙ্গার তলা দিয়ে শুরু হয় সুরঙ্গ কাটার কাজ। সুষ্ঠুভাবে ধর্মতলা পর্যন্ত সেই কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর শিয়ালদহ কে সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়।
উর্বি ও চন্ডী দুটি টানেল বোরিং মেশিন যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিমগামী সুরঙ্গ তৈরীর কাজ করে। বউবাজার এর কাছে সেই সুরঙ্গ তৈরির চলার সময় মাটির বাইশমিটার গভীরে জমে থাকা জলস্তরে ধাক্কা মারে চন্ডী। প্রচুর পরিমাণে জল বেরোতে থাকায় বিকল হয়ে পড়ে টানেল বোরিং মেশিনটি। আর এরপরই বিপর্যয় নেমে আসে গোটা বউবাজার চত্বরে।
২০১৯ সালে, ৩১ আগস্ট প্রথম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় বউবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের বাসিন্দারা। একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। ভিটে ছাড়া হতে হয় ফাটল ধরা বাড়ির সদস্যদের। মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? উঠে আসে একাধিক প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাচীন কলকাতায় এই বউবাজার অঞ্চল জুড়ে ছিল বিস্তীর্ণ জলাভূমি। সেই জলাভূমি বুঝিয়ে তৈরি হয় শিয়ালদহ বউবাজারের মত একাধিক এলাকা। প্রাচীন কলকাতার মানচিত্রে সেইসব জলাভূমির চিহ্ন স্পষ্ট। দেশের মধ্যে অত্যাধুনিক সংস্থা মেট্রো রেল। কিভাবে সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য এই বউবাজারের অঞ্চলকে বেছে নেওয়া হলো। সে নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, তবে এখানেই শেষ নয় এই বিপর্যয়ের পর বেশ কয়েকদিন মেট্রোর কাজ বন্ধ রাখার পর আবারও শুরু হয় বউবাজার অঞ্চলে মেট্রো সুরঙ্গের কাজ।
চন্ডীর কার্যক্ষমতা হারিয়ে যাবার পর অপর একটি টানেল বোরিং মেশিন উর্মি চন্ডীর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে।ফের ২০১৯ এর স্মৃতিউসকে আড়াই বছর পর দ্বিতীয়বারের জন্য বিপর্যয় নেমে আসে বউবাজারে, ২০২২ সালে মে মাসে আবারো ১০ টি বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। ভিটে হারা হয় ২৮টি পরিবার। আবারো স্তব্ধ হয়ে পড়ে শিয়ালদাগামী মেট্রো সুরঙ্গের কাজ। দ্বিতীয় বিপর্যয়ের ঠিক পাঁচ মাস পর পুনরায় পূর্ব ও পশ্চিমগামী সুরঙ্গের সংযোগকারী পথের কাজে হাত লাগায় মেট্রোরেল।
কাজ শুরু হতেই সুরঙ্গের ভিতরে জল প্রবেশ করায় ফাটল দেখা দেয় বউবাজারের মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে। তিনটি পর্যায় বিপর্যয় মিলিয়ে মোট ১৮০ টি বাড়ির সদস্যরা আজ বাস্তুহারা। বউবাজার অঞ্চলের মাটি চরিত্রগত দিক থেকে অনেকটাই দুর্বল। সেখানে মাটির নিচে বালির পরিমাণ অনেকটাই বেশি। যে কারণে এই বিপর্যয়ের রুখতে কে এম আর সি এল এর তরফ থেকে গ্রাউটিং করা হলেও কোন সুরাহা মেলেনি। সুরঙ্গের ভেতর দিয়ে পাকাপাকিভাবে মেট্রো চলাচলের জন্য এই সংযোগকারী পথ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
কোন কারনে মেট্রো বিভ্রাট ঘটলে এই সংযোগকারী পথের মাধ্যমে যাত্রীদের বাহিরে বার করে আনা হয়। ফলে রেলওয়ে সেফটি বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী যে কোন মেট্রোপথেই এই সংযোগকারী পথ রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে এই অঞ্চল দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মেট্রো চলাচল করলে আরো বেশি কম্পন অনুভূত হবে। ফলে আবারও সুরঙ্গের ধস সহ বউবাজার অঞ্চলের একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিতে পারে। এখন প্রশ্ন কি হবে তাহলে আগামী দিনের এসপ্ল্যানেড থেকে শিয়ালদহগামী মেট্রোর ভবিষ্যৎ?