অস্তিত্ব সংকটে বদ্রীনাথের প্রবেশদ্বার
নিউজ ডেস্ক: পরিবেশবিদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। ক্রমশ ডুবতে বসেছে হিমালয়ের কোলে বেড়ে ওঠা যোশী মঠ। নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালার নবীনতম পর্বত এটি। ভূতত্ত্ববিদদের মতে এই পর্বত ক্রমবর্ধমান এর গঠন এখনো পর্যন্ত অসম্পূর্ণ। বছর শুরুতেই জোশী মঠের গায়ে গভীর ফাটলের চিহ্ন স্পষ্ট হয়। প্রথমবার বড়সড়ো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় জ্যোতির র্লিঙ্গের প্রবেশদ্বার।
একের পর এক বাড়িতে ফাটল ধরে। এখনো পর্যন্ত ৭৬০ টি বাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন। সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আতঙ্কে পথে নেমেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে আশ্রয়স্থলে।বিশেষজ্ঞদের মতে কাঠের বাড়ির বদলে কংক্রিটের চাদরই এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।উন্নয়নের আগে সমীক্ষার গাফিলতির জেরেই বিপদের সম্মুখীন হিমালয়।কতটা সুরক্ষিত থাকবে কেদারনাথ,বদ্রীনাথ এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে উত্তরাখণ্ডের নাগরিকদেরকে মধ্যে।
বছর দুয়েক আগেই এই অশনি সংকেতের পূর্বাভাস দিয়েছিল ভূবিজ্ঞানীরা।সেই আশঙ্কার তোয়াক্কা না করে চলছিলো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পর্বত কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ। ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তপবন – বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুরঙ্গ তৈরির কাজে একের পর এক ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, এই একই নির্মাণ কার্যের জন্য অলকানন্দা নদীর জল রোধ করা হয়।
এর ফলে নষ্ট হয় প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পাহাড় কেটে চারধামকে এক করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয় জাতীয় হাইওয়ে সেভেনের। বিপর্যয়ের পর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর পথে চারধাম সংযুক্তকারী সড়ক যোজনার ও তপবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
প্রকৃতির ওপর এই অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ এর ফলে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় নয় সেন্টিমিটার ডুবে গিয়েছে যোশীমঠ। বিপর্যয়ের পর ইসরোর উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েকদিনের মধ্যে ৫.৪ সেন্টিমিটার ডুবে গিয়েছে পার্বত্য এই জনপদটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোন অঞ্চলের কোন উন্নয়ন করার আগে যে সমীক্ষার প্রয়োজন সেই সমীক্ষার অভাবের কারণে আজ বিপদের সম্মুখীন যোশী মঠ।আগামী কয়েক বছরে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এই পূর্ণভূমি এমনই আশঙ্কা প্রকাশ ভূ বিজ্ঞানীদের।
কতটা প্রভাব পড়বে পূর্ব হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল গুলিতে? কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে দার্জিলিং, কালিম্পং সহ রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল গুলি। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, যোশী মঠের বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দারা। ৯০ এর দশকে হিমালয়ের কোলে এইসব পার্বত্য অঞ্চল গুলিতে ছিল কাঠের বাড়ি। প্রকৃতির সাথে মানুষের সামঞ্জস্য বজায় ছিল। বর্তমানে উন্নয়নের জোয়ারে কংক্রিটের ঘেরা জঙ্গলে হারিয়ে যেতে চলেছে এই বৈষম্য।
মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে উত্তরকাশী সহ বিস্তীর্ণ এলাকা।উত্তরাখণ্ডের যোশী মঠের বিপর্যয়ের মাঝে ভূকম্পনে কেটে উঠেছে উত্তরকাশী থেকে হিমাচল প্রদেশ। হিমালয়ের কোলে এই সমস্ত অঞ্চল মূলত ভূমিকম্প প্রবল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। তবে ভূমিকম্পের তীব্রতা খুব বেশি না হওয়ায়। তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও। আগামী দিনে প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ করে উন্নয়ন জারি থাকলে যেকোনো ভূমিকম্পে মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যেতে পারে উত্তরকাশী এমনই আশঙ্কা প্রকাশ ভূতত্ত্ববিদদের।
সম্প্রতি ইসরোর উপগ্রহের তোলা ছবি ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়ার ফলে সরগোল সৃষ্টি হয়েছে। আরো বড় কোন বিপদের আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞেরা।অবিলম্বে উত্তরাখণ্ডের এই উন্নয়নমূলক নির্মাণ কাজ বন্ধ না করলে আগামী দিনে আরও বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল এমনই মত বিশেষজ্ঞদের।