ফিরে দেখা শৈশব

0 0
Read Time:6 Minute, 52 Second

নিউজ ডেস্ক : শৈশব যা আমাদের জীবনের সোনায় মোড়ানো এক অধ্যায়। এই অধ্যায় যেন ভগবানের কাছ থেকে পাওয়া একটি বিশাল উপহার। শৈশবে কাটানো দিনগুলো চলে গেলে হাজারো চাইলে তা আর পাওয়া যায় না।

আমাদের শৈশব কেটেছে শহরতলীর একটি ছোট্ট গ্রামে। সেই গ্রাম হয়তো আজ আর নেই, বড় বড় কনস্ট্রাকশন এ পরিণত হয়েছে। কিন্তু শৈশবের দিনগুলি আজও স্মৃতির পাতায় লেখা আছে। আমার আজও মনে আছে স্কুলে আমরা চোর, পুলিশ ডাকাত ,বাবু খেলতাম। একটি সাদা পেজকে চার টুকরো করে তার মধ্যে লিখে খেলাটি শুরু করা হতো।অনেক সময় পেন ফাইটিংও খেলতাম,। বেশ মজা লাগতো। তারপর স্কুল থেকে ফিরে, বইয়ের বোঝাটিকে ফেলে দিয়ে ছুটতাম মাঠে, সব বন্ধুরা এক জায়গায় হয়ে তক্তার তৈরি ব্যাট দিয়ে ব্যাট বল খেলতাম,

শুধু যে ব্যাট বল খেলতাম তা নয়, কখনো কখনো হা-ডুডু, কবাডি, লুকোচুরি, বুড়িবসন্ত, মাটিতে ঘর কেটে কিৎকিৎ, আরো অনেক কিছু খেলতাম। হাডুডু খেলার সময় যখন আমাদের দল হেরে যেত, তখন জিতে যাওয়া দলটির সাথে আমাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যেত। সেই এক রেষারেষির খেলা।

সন্তকালে কোকিল ডাকা বিকালে আমরা গুলতি নিয়ে বার হতাম আম পারতে, গুলতি ছিল আমাদের আরেকটি খেলার বস্তু। যা দিয়ে গাছ থেকে আম জামরুল, পেয়ারা, চুরি করতে খুব সুবিধা হত। আজ এই ব্যস্ততার জীবনে যখন আমাদের কানে ভেসে আসে কোকিলের ডাক, বসন্তের সেই বাতাস, তখন যেন আমার স্মৃতি আবার ফিরে যায় সেই শৈশবে। যা আজ ফুরিয়ে গেছে।


আমাদের খেলার আরেকটি বিশেষ বস্তু ছিল লাট্টু। এ লাট্টুর মধ্যে দড়ি পাকিয়ে মাঠের মধ্যে ছেড়ে দিলেই সেটি বনবন করে ঘুরতো। বেশ আনন্দ লাগতো সেটি দেখতে। আর লাট্টু ঘোরাতে ঘোরাতে মনে পড়ে যেত,” স্কুলের স্যার যে বলেছিল পৃথিবী নাকি লাড্ডুর মতন ঘোরে”।

লাট্টু ঘুরিয়ে বেশ মজা পেতাম। আরেকটি খুব আনন্দের জিনিস হচ্ছে সাইকেল রিক্সার টায়ার, যা হাতে নিয়ে মাঠের মধ্যে লাঠি দিয়ে ঘোরাতে বেশ ভালো লাগতো। টায়ার টা ঘুরতো আর আমরা তার পেছন পেছন ছুটতাম। তখন এক আলাদাই উৎসাহী, আলাদাই একটা জোশ কাজ করতো আমাদের মধ্যে।এইসব খেলার বস্তুগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। যে কাকুর দোকানে গিয়ে চাইলেই পাওয়া যেত, লাট্টু, গুলতি, গুলি, সেসব কিছু আর পাওয়াই যায় না। সবই আজ বিলুপ্তির পথে হাটা দিয়েছে।

মরা গ্রীষ্মকালে গাছের তলায় কানামাছি খেলতাম, একজনের চোখে কাপড় বেঁধে দিতাম, আর সে আমাদের খুঁজে বেড়াতো। তারপর সুপারি গাছের পাতার মধ্যে একজনকে বসিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া, কুমিরডাঙ্গা ,ইকির বিকির চাম চিকির , এগুলো খেলার একটি বিশেষ বিষয় ছিল।


আর বর্ষাকালের আনন্দটি একটু অন্যরকম ছিল । যেদিন প্রচুর বৃষ্টি হতো সেই দিন স্কুল কামাই করে বন্ধুদের সাথে একদল মিলে ফুটবল খেলতে যাওয়া, কাদামাটি দিয়ে মাটির খেলনা বানানো, কাগজের নৌকা বানিয়ে জলে ভাসিয়ে দেওয়া, এ সমস্ত বিষয়গুলি আজ অতীত। যতদিন যাচ্ছে মাটির সঙ্গে ছোটদের সম্পর্ক কমে যাচ্ছে। আসলে আমাদের চারিপাশটা এতটাই ইট কাঠ পাথরে পরিণত হচ্ছে যে মাটি জিনিসটা পাওয়া এখন খুব কঠিন । সবই আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

তির ডায়েরির পাতা উল্টালে আরো একটি খেলার কথা মনে পড়ে যায়, বর বউ খেলা। আবার একটি বন্ধু ছিল নিমাই তাকে আমি বর বানাতাম, আর আমি হতাম ওর বউ। এই নিয়ে একটি ছোট্ট পরিবার তৈরি করে আমরা খেলনা বাটি খেলতাম।


স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে যখন টিফিনের জন্য টাকা দিত তখন তার মধ্যে থেকে কিছুটা টাকা বাঁচিয়ে রেখে, স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কাকুটির কাছ থেকে আমসত্ত্ব কিনতাম, কখনো কখনো একটু কুলের আচার। কুলের আচার খেতে খেতে খুব আনন্দ সহকারে বাড়ি ফিরতাম। বিকালে পড়তে যাওয়ার পথে আগে আমরা পৌছাতাম কাকুর দোকানে। তখন আমাদের পছন্দের খাবারগুলি ছিল মামা ভুজিয়া ,ডালমুট, সাকি, ম্যাংগো বাইট, বুমার, আরো অনেক কিছু। এখন দোকানে এই গুলোর পরিবর্তে অনেক খাবার পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলির সঙ্গে আমাদের একটি আলাদা সম্পর্ক ছিল।


ধীরে ধীরে শৈশবের দিনগুলি কাটিয়ে আমরা বড় হয়ে উঠলাম। তবে মনের ডায়েরীতে শৈশবের দিনগুলো আজও বর্তমান। যা কোনদিনও ভুলতে পারবো না আমরা। মাঝেমধ্যে ভাবি কবে যে এত বড় হয়ে গেলাম, সেই স্কুলের ব্যাগের বোঝাটির থেকে আজ অফিসের ব্যাগের বোঝাটা একটু বেশিই ভারী, । আর এই ব্যাগের বোঝা নিয়ে যখন ক্লান্ত সন্ধ্যায় ফিরি, তখন মৃদু বাতাস ও একফালি চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হয় সমস্ত দায়িত্ব ছেড়ে আবার ফিরে যায় সোনায় বাঁধানো সেই শৈশবে।

শৈশব , পর্ব – ২
কলমে – নাফিসা পারভীন
চিত্রগ্রাহক – হিমাদ্রী ভৌমিক

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
100 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!