৩০ বছরে মাধ্যমিক!
নিউজ ডেস্ক::বয়স ত্রিশ। এই বয়সে দুই সন্তান সামলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সখিনা খাতুন। নিজেই জানিয়েছে, স্বামী ছেড়ে চলে গেলেও পাশে দাঁড়িয়েছে বান্ধবী। তারপরেই তাঁর লড়াই শুরু। স্বপ্ন ছিল মাধ্যমিক পাশ করার। এবার সেই স্বপ্নই পূরণ হতে চলেছে। মধ্যে ১৫ বছর কেটে গেলেও মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি সে।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার সখিনা খাতুন জানিয়েছে, ২০১৮-র ৩ ডিসেম্বর, স্বামী দুই বাচ্চা-সহ বাড়ি থেকে মেরে তাড়িয়ে দেয়। তারপরেই বান্ধবী কাকলি রায়চৌধুরী তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। কারণ সখিনার বাবা-মা মারা গিয়েছেন আগেই। দুবছরের আগে কাকলি রায়চৌধুরীর ইচ্ছায় স্কুলে ভর্তি আর এবার মাধ্যমিক দেওয়া, বলেছেন সখিনা। ছেলে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে।
সখিনা জানিয়েছে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেই তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। কোনও রকমে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছিল। এর ১৫ বছর পরে ফের স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি। আর ২০২৩-এ মাধ্যমিক। পাশ করার পরেই সে ভবিষ্যত চিন্তাভাবনার কথা জানাবে।
সখিনা জানিয়েছে হিন্দু বাড়িতে থাকলেও তাঁর ধর্ম পালনে বাধা নেই। নমাজ পরা থেকে শুরু করে সবেবরাত, ইদ সবই পালন করে সে, কাকলিদের বাড়িতে থেকেই। ভাইফোঁটায় কাকলির দাদাকে সে ফোঁটাও দেয় বলে জানিয়েছে। আর পরীক্ষার দিনগুলোতে কাকলির মা তাঁকে দইয়ের ফোঁটা দিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠান বলে নিজেই জানিয়েছে সখিনা। তাঁর পরীক্ষার সিট পড়েছে মুর্শিদাবাদের সাহাজাদপুর হাইস্কুলে।
পাশে থাকা বান্ধবী কাকলী রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, পরিবার পাশে না থাকলে কিছুই করতে পারতেন না তিনি। পরিবার সম্মতি দেওয়ার পরেই সখিনাকে নিজের বাড়িতে রাখতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বাড়িতে দুই ধর্ম পালনে অসুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন। তবে বাড়িতে সখিনা কীভাবে থাকে, তা তাঁর মুখ থেকেই শোনা উচিত বলেও জানিয়েছেন কাকলি।
বাড়িতে যাঁদের আশ্রয় কিংবা প্রশ্রয় না পেলে সখিনা মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন আশ্রয় টুকু পেত না সেই বাড়ির কর্ত্রী কাকলির মা জানিয়েছেন, বান্ধবী হওয়ায় কাকলি সখিনার বাড়িতে যেত। কিন্তু তার ওপরে অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এরপর ঝামেলা চরমে উঠলে সখিনাকে তাঁরা আশ্রয় দেন। সখিনাতে তিনি মেয়ে হিসেবেও দেখেন বলে জানিয়েছেন। বাড়িতে অন্য ধর্ম পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।