একের পর এক জেলা থেকে আসছে মৃত্যুর খবর
নিউজ ডেস্ক::শতাব্দীর অন্যতম বড় ট্রেন ( Odisha) দুর্ঘটনা। একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে গোটা ট্রেন। একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু শেষ কবে দেখেছে তা কেউই মনে করতে পারছেন না।
কার্যত প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রেলের তরফে জানানো হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত একাধিক বগিতে এখনও একাধিক দেহ আটকে আছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে শঙ্কা।
মৃতদের মধ্যে বড় একটা অংশ বাংলার আছে বলেই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর সেটাই ক্রমশ সত্যি হতে চলেছে। বেলা যত বাড়ছে একের পর এক জেলা থেকে মৃতের খবর সামনে আসছে।
শুক্রবার সকালে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া সেরে তিন ভাই হারান গায়েন (৫১),নিশিকান্ত গায়েন(৪০) ও দিবাকর গায়েন(৩৩) বাড়ি থেকে বের হন। এটাই যে শেষ যাত্রা তা কল্পনারও বাইরে ছিল। কথা ছিল, করমন্ডল এক্সপ্রেস চেপে অন্ধ্রপ্রদেশ যাওয়ার। কিন্তু মাঝ পথেই সব শেষ!
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু তিন ভাইয়ের। তাদের সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ওই দলের সঙ্গে যাওয়া সঞ্জয় হালদার(২৪) ও বিকাশ হালদার(২৬ ) নামে আরও দু’জনের। ঘটনাস্থল বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছড়ানেখালি গ্রামের।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই রাতভর দারুণ উৎকণ্ঠের মধ্যে কাটে গায়েন পরিবারের। সকাল বেলা মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে কান্না ভেঙে পড়েছে পরিবার। বাড়ির বারান্দায় ক্রমাগত কেঁদে চলেছেন মা সুভদ্রা গায়েন।
অন্যদিকে বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মালদহের চাঁচলের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। তাঁর বাড়ি ধানগাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিয়াঘাট পূর্বপাড়ায়। মৃতের নাম মাশরেকুল হক(২৩) বলে জানা গিয়েছে। এলাকারই কয়েকজনের সঙ্গে চেন্নাইয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল সে।
রাতে দুর্ঘটনার খবর জানাজানি হতেই পরিবারের লোকের উৎকণ্ঠা শুরু হয়। ভোরে মাশরেকুলের মৃত্যুর খবর আসে। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন মাশরেকুলের চার সঙ্গী। তাঁদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। খবর পেয়ে এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবারের লোকজন।
পূর্ব মেদিনীপুর থেকেও মৃত্যুর খবর আসছে। ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে শেখ আজিমুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের শ্রীরামপুরের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এমন ঘটনায় শোকাস্তব্ধ গোটা পরিবার।
কর্মসূত্রে সে ভদ্রক যাচ্ছিল বলে পরিবার সূত্রে খবর।
এই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। রাত এগারোটা নাগাদ তাঁর বাড়িতে মৃত্যুর খবর আসে। ভদ্রকে টাইলসের লেবারের কাজ করত সে। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে সময় যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে মৃত ও আহতের সংখ্যা। চারিদিকে শুধু কান্না, মৃত্যু, হাহাকার। অভিশপ্ত ট্রেনে ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান বড়শুলের ২৫ বছরের যুবক সফিক কাজী। পেটের তাগিদে রাজমিস্ত্রি জোগাড়ের কাজে যাচ্ছিলেন সফিক। ছিলেন তাঁর আরও এক সঙ্গী। বিকেল বেলা শেষ ভিডিও কলে কথা হয়েছিল স্ত্রীর সঙ্গে। কথা দিয়েছিলেন দ্রুত ফিরবেন। কিন্তু ফেরা আর হল না।
জানা যায় মাথায় আঘাত লেগেই মৃত্যু হয়েছে তার। বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। কি হবে ওই সন্তানের ভবিষ্যৎ? প্রশ্নটা থেকেই গেল। আরও বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে মৃতের খবর সামনে আসছে।
ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের নাগরাকাটা চা বাগানের এক যুবকের । ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। মৃতের নাম সাগর খেরিয়া (৩০)। তিনি নাগরাকাটা চা বাগানের ফুটবল লাইনের বাসিন্দা ছিলেন।
জানা গিয়েছে, ডুয়ার্সের ১৪ জন গত বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্গালোর থেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলেন।
কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকাই বালেশ্বরের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বাকি ১৩ জন কমবেশি জখম হলেও মৃত্যু হয় সাগর খেরিয়ার। রাতেই ফোনে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে আহত এবং পরে মৃত্যুর খবর পায়।