ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা
নিউজ ডেস্ক::লকডাউনের সময় বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে বাংলার অনেকেই ছিলেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। বিভিন্ন জেলার কেউ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ আহত, কেউ নিখোঁজ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লকডাউনে বাংলায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের নানা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। পোর্টাল খুলে কর্মসংস্থানের কথাও বলেন। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি, ভিনরাজ্যে মানুষের কাজ করতে যাওয়াতেই প্রমাণিত।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসে অনেকেই যাতায়াত করেন যাঁরা দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে যান। অনেকেই থাকেন যাঁরা বিভিন্ন জায়গায় যান কাজের সন্ধানে বা ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিতে। কেউ রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন, কেউ রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে। কেউ বা যান ধান রোয়ার কাজে। এমন অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে আহত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছড়ানেখালি গ্রামের হারাণ গায়েন (৫১),নিশিকান্ত গায়েন(৪০) ও দিবাকর গায়েন(৩৩) করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে অন্ধ্রপ্রদেশ যাচ্ছিলেন ধান রোয়ার কাজ করতে। তাঁদের সঙ্গেই প্রাণ হারান তাঁদের আরও ২ সঙ্গী সঞ্জয় হালদার (২৪) ও বিকাশ হালদার (২৬)।
পূর্ব মেদিনীপুরের শেখ আজিমুদ্দিনের বাড়ি তমলুকের শ্রীরামপুরের। তিনি কর্মসূত্রে ভদ্রক যাচ্ছিলেন। ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। টাইলসের লেবারের কাজ করতেন। বালেশ্বর থেকে ট্রেন ধরার কয়েক মিনিট পরেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন।
ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মালদহের চাঁচলের ধানগাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিয়াঘাট পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মাশরেকুল হকের। ২৩ বছরেই প্রাণ হারালেন তিনি। এলাকারই কয়েকজনের সঙ্গে এই পরিযায়ী শ্রমিক চেন্নাইয়ে যাচ্ছিলেন কাজ করতে। তাঁর চার সঙ্গীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের ২৫ বছরের সফিক কাজী। পেটের তাগিদে রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও একজন ছিলেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লেগে মৃত্যু হয়েছে সফিকের।
অন্ধ্রপ্রদেশে ধান রোয়ার জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধরেছিলেন সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের সাতজেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেকেই। তাঁদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার।
পেটের তাগিদে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছিলেন বাঁকুড়ার সোনামুখীর হামিরহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাটজোড় গ্রামের বিদ্যুৎ পাল। স্বপ্ন ছিল পরিবারের আর্থিক অনটন ঘোচানোর। ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি বালেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি। এই গ্রামেরই আরেক পরিযায়ী শ্রমিক সুজন বাউড়িও আহত।
বাঁকুড়ার সিমলাপালের ভূতশহরের বাসিন্দা শুভেন্দু সৎপতি পরিযায়ী শ্রমিক। কাজে যোগ দিতে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। কোনওরকমে প্রাণে বাঁচেন।
বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে গিয়েছিলেন কোচবিহারের নব্যেন্দু গোস্বামী ও শিবা রায়। তাঁরা ফিরছিলেন হামসফর এক্সপ্রেসে। দুজনেই আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে কেরলে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ২২ বছরের সঞ্জীব মণ্ডল। তাঁর খোঁজ না পেয়ে চিন্তিত পরিবার।
মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণ ভারতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছিলেন সাগরদিঘী থানার মাদারপাড়া এবং নিমগাছি এলাকার তিন যুবক। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন মুন্সি টুডু, শম্ভুলাল কিস্কু ও শিলবানুস টুডু। দুর্ঘটনার জেরে মুন্সি টুডু ঘটনাস্থলেই মারা যান। শম্ভুলাল ওডিশার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিলবানুস টুডু এখনও নিখোঁজ।
ট্রেন দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ফারাক্কার এক কলেজ পড়ুয়াও। সুতি থানার ওমরাপুর এলাকার বাসিন্দা হারুন বাদশা (১৮), মুকলেসুর শেখ (২০) ও ইসমাইল শেখ (১৮) করমণ্ডল এক্সপ্রেসে কর্মসূত্রে দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে হারুন নিখোঁজ। চেন্নাইয়ের হোটেলে কাজ করতে যাওয়ার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়েন সুতির কাশিমনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০ যুবক।
দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির খড়গ্রাম, ভরতপুর, সালারের একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। অনেকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। মুর্শিদাবাদে কর্মসংস্থানের বিশেষ সুযোগ নেই। তাই এই শ্রমিকদের পাড়ি দিতে হয় ভিনরাজ্যে। সাগরদিঘির একজন নিখোঁজ। আহত ২ জন।
ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের নাগরাকাটা চা বাগানের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে গতকালের দুর্ঘটনায়। আহত বেশ কয়েকজন। মৃতের নাম সাগর খেরিয়া (৩০)। তিনি নাগরাকাটা চা বাগানের ফুটবল লাইনের বাসিন্দা ছিলেন।
ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ছিলেন হুগলির পোলবা সুগন্ধা পঞ্চায়েতের গোটু চারাবাগানের তিনজন। ফুলমনি টুডু,মুকুলি টুডু ও লক্ষ্মী মূর্মু। এক মাস আগে এক ঠিকাদার মারফত সুগন্ধা এলাকা থেকে ৯ জন মহিলা ধান রোয়ার কাজে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন। কাটপাডি জংশন থেকে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ওঠেন।