চিল্কিগড়ের দুর্গা পুজো

নিউজ ডেস্ক ::সামন্ত রাজা গোপীনাথ মত্ত গজসিং স্বপ্নে নির্দেশ পেয়েছিলেন রানির হাতের কঙ্কণ দিয়ে তৈরি করতে হবে মায়ের চতুর্ভুজা অশ্বারোহী মূর্তি, কনক দুর্গা নামে পুজো নেবেন মা চণ্ডী। সেই থেকেই শুরু হয় চিল্কিগড় রাজবাড়ির দুর্গা পুজো। অনেক খুঁজেও যখন পূজার জন্য কোনও ব্রাহ্মণ পাওয়া যায়না, তখন ওড়িশা থেকে আনা হয় রামচন্দ্র ষড়ঙ্গীকে। সেই থেকে এই ষড়ঙ্গী বংশই বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছে এখানে৷ কথিত আছে, এক সময় মায়ের পুজো সেরে বাড়ি ফেরার পথে রাজ পুরোহিতকে ছোবল মারে একটি কালো খরিস সাপ। পুরোহিত যখন যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট তখনই স্বপ্নে দেখা দিলেন নীল শাড়ি পরিহিতা চতুর্ভুজা দুর্গা; সুস্থ হলেন পুরোহিত, দেবীর আশীর্বাদে অঞ্চলে তারপর থেকে আর দেখা যায়নি এই সাপ। রাজত্ব অবলুপ্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে রাজবাড়ির ১৫ দিনের পুজো নেমে আসে ৫ দিনে। এই ৫ দিনই মহা সমারোহে হয় চণ্ডীপাঠ। আয়োজন হয় বলির৷ দেবী এখানে রক্তমুখী, তাই বলি বাধ্যতামূলক। এক সময় নরবলিও হত৷ কথিত আছে, একবার এক বালককে নিয়ে আসা হয় বলি দিতে। হাঁড়ি কাঠে গলা দেওয়ার পর দুর্গামন্ত্র জপ করতে শুরু করে সে; জানা যায় সে এক ব্রাহ্মণ সন্তান। সেই থেকে নরবলি বন্ধ হয়। এখন মহাষ্টমীতে মায়ের কাছে নিবেদন করা হয় ১০ থেকে ১২ টি মোষ আর পাঁচশোর-ও বেশি ছাগল। এখন পঞ্চমীর দিন রাজবাড়ির মহিলারা মায়ের মন্দিরে গিয়ে মাকে নতুন সাজে সাজান৷ অষ্টমী পুজোর দিন মন্দিরে উপস্থিত থাকেন কেবলমাত্র রাজবাড়ির লোকজন। পুজো হয়ে গেলে মন্দির খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য৷ অষ্টমীতেই পাওয়া যায় বিরাম ভোগ। পুজোর পাশাপাশি প্রাসাদ প্রাঙ্গনে বসে মেলা৷ হয় নাচ গানের অনুষ্ঠান৷ সেকালের রাজা-প্রজা সকলেই এখন একইসঙ্গে মেতে ওঠেন উৎসব অঙ্গনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *