দুর্গা নামের উৎপত্তি

নিউজ ডেস্ক ::দুর্গা (সংস্কৃত: दुर्गा; অর্থাৎ “যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন”; এবং “যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন”) হলেন হিন্দু দেবী পার্বতীর এক উগ্র রূপ। হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি জনপ্রিয় এক দেবী। তাঁকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে মান্য করেন। তিনি চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহন্ত্রী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, দাক্ষায়ণী, অদ্রিজা, নগনন্দিনী, সিংহবাহিনী, শারদা, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিতা। দুর্গার বাহুসংখ্যা অনেক। তাঁর সহস্রভুজা, ত্রিংশতিভুজা, বিংশতিভুজা, অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজা মূর্তির উল্লেখ পুরাণ গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যে দেখা যায়। তবে দশভুজা রূপটিই সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর বাহন সিংহ (উত্তর ও পশ্চিমভারতে আঞ্চলিকভাবে বাঘ)। মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে মহিষাসুর নামে এক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। তাঁর অনেক রূপ, যার মধ্যে কালী রূপটি অন্যতম জনপ্রিয়‌।

দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে হিরণ্যাক্ষ পুত্র রুরুর বংশধর দুর্গম সমুদ্র মন্থনকালীন অসুরদের বঞ্চনা তথা তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ কামনায় ব্রহ্মার তপস্যা করে। সেই কঠোর সাধনায় সন্তুষ্ট ব্রহ্মার কাছে দুর্গম এই বর প্রার্থনা করে যে তাকে এমন এক নারী বধ করবেন যিনি অনাবদ্ধকে আবদ্ধ করতে পটিয়সী। বরলাভের অহংকারে মত্ত দুর্গম এর পর শুরু করে চরম বিশৃঙ্খলা, মাৎস্যন্যায়। তার অত্যাচার আর ধ্বংসলীলায় ত্রিভুবন বিধ্বস্ত। ক্ষমতা আর বিজয়গর্বে মত্ত অসুর এবার চতুর্বেদকে হস্তগত করলে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষায় দেবী মহামায়া এক দশভুজারূপী মঙ্গলময়ী দেবী রূপে আবির্ভূতা হন আর দুর্গমাসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেন। বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ব্যাপী ঘোরযুদ্ধে দেবী ও তাঁর অংশোদ্ভূতা গুহ্যকালী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরা, ভৈরবী প্রভৃতি দেবীগণ দুর্গমাসুরের কোটি সৈন্যকে নিধন করেন। এরপর দেবী দুর্গমাসুরকে সুতীক্ষ্ণ শূলের আঘাতে বধ করেন এবং চতুর্বেদ ও সকল মন্ত্র উদ্ধার করেন। দেবী তাই সর্বমন্ত্রময়ী। ক্ষমাশীলা পরমাজননী দেবী এরপর অনুতাপদগ্ধ দুর্গমাসুরকে অদ্বৈত ব্রহ্মের জ্ঞান প্রদান করে মোক্ষলাভ করান। দেবী দুর্গা স্বয়ং সচ্চিদানন্দময়ী পরব্রহ্মস্বরূপা আদ্যাশক্তি মহামায়া। যে সময় বা কাল সৃষ্টিতে একমাত্র আবদ্ধ নয়,যে কাল চিরন্তন সত্য, সেই কালকে পিষ্ট করেন মহাকাল শিব আর মহাকালকে পদতলে রেখেছেন দেবী মহামায়া। তিনি পরমাপ্রকৃতি; দেবী ভিন্ন শিব কেবল জড় বস্তু , দেবীর শক্তিতেই ব্রহ্মা সৃজন, বিষ্ণু পালন এবং রুদ্র সংহার করেন। মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডী ও দুর্গতিনাশিনী দুর্গাকে এক অভেদ মূর্তিকল্পে প্রতিষ্ঠিতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *