নিউজ ডেস্ক ::পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, যজ্ঞস্থলে পিতা দক্ষ প্রজাপতির মুখে পতি শিবের নিন্দাবাণী ও কটূক্তি শুনে ক্রোধে ও ক্ষোভে অধীরা সতী দেহত্যাগ করেছিলেন এবং শিবকে আবার পতিরূপে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় গিরীরাজ হিমালয়ের গৃহে দেবী মহামায়া তার কন্যা পার্বতীরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পুরাণে বর্ণিত মহিষাসরমর্দিনী চণ্ডিকা বা শুম্ভ নিশুম্ভ দলনি কৌশিকী এই সকল দেবী মাতা পার্বতীর অবতার।
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে রচিত বাংলা আগমনী গানগুলিতে দুর্গারূপে শিবজায়া পার্বতীর সপরিবারে পিতৃগৃহে অবস্থানের এই আনন্দময় দিনগুলোর এবং তার বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায়। এসব গানে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে কন্যা বিরহে কাতরা মা মেনকার গভীর অপত্যস্নেহ, অন্যদিকে তেমনি চিত্রিত হয়েছে স্বামী সোহাগিনী পার্বতীর গর্ব ও আনন্দের উচ্ছাস; গৌরী একাধারে জগজ্জননী এবং বাংলার জননীদের কাছে কন্যাসমা। আগমনী গানগুলি শাক্ত পদাবলীর অন্তর্গত; এগুলি রচয়িতাদের মধ্যে সাধক রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত চক্রবর্তী, দাশরথি রায় এবং পরবর্তীকালে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ ব্যক্তিরা প্রভূত মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।
মহিষাসুরমর্দিনী
মহিষাসুরমর্দিনী মহালয়ার দিন ভোরবেলা সম্প্রচারিত একটি বিশেষ বেতার অনুষ্ঠান। এটি ১৯৩২ সাল থেকে আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত হচ্ছে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাজাতি সদনের একটি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠানে মস্করা করে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ঘরে খিল দেওয়া থাকলেও আমি পৌঁছে যাই সকলের কাছে।’ কারণ বেতারে চণ্ডীপাঠ সবাই শোনেন।এই অনুষ্ঠানে শ্রীশ্রীচণ্ডী থেকে নির্বাচিত কিছু স্তোত্র, আগমনী গান ও বাংলা ভক্তিগীতি সহ শ্রীশ্রীচণ্ডীর দুটি গল্প শ্রুতিনাটকের আকারে শোনানো হয়। সর্বভারতীয় শ্রোতাদের জন্য অনুষ্ঠানটির হিন্দি সংস্করণ একই সময় সম্প্রচারিত হয়। এটি মোট দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান। প্রথম দিকে এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হতো। ১৯৬০-এর দশক থেকে অনুষ্ঠানটির রেকর্ড সম্প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয়।আকাশবাণীর পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠানটি ক্যাসেট ও সিডি আকারেও প্রকাশ করা হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠসহ অন্যান্য পাঠগুলি করেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তার পাঠ এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এই অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেতা উত্তমকুমারকে দিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠান করাতে গেলে শ্রোতারা নতুন অনুষ্ঠানটির প্রতি বিরূপ হন। ফলে পরবর্তীতে পুরোনো অনুষ্ঠানটির সম্প্রচারই চলতে থাকে। অনুষ্ঠানটির গান রচনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সুরারোপ করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। গানগুলি গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সুপ্রীতি ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পীরা।