নিউজ ডেস্ক ::ধর্মমঙ্গল কাব্যে আমরা দেখেছি ধর্ম ঠাকুরের পুজো করেন কোনো ব্রহ্মণ নয়, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। ঝাড়গ্রামের গুপ্তমনির মন্দিরে তেমনই এক ট্রেডিশন চলেছে সাড়ে সাতশো বছর ধরে। আঞ্চালিক ইতিহাস বলছে, ওই গুপ্তমনির মন্দিরের মন্দিরের বয়স মেরে-কেটে একশো বছর । কিন্তু পুজোর বয়স প্রায় সাড়ে সাতশ বছর। শুনে অবাক লাগছে নিশ্চয়ই? আসলে বর্তমান মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল প্রায় বিংশ শতকের ত্রিশের দশক নাগাদ। আর প্রাচীন মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মল্লরাজ নরসিংহ মল্লদেবের আমলে। ঝাড়গ্রামের গুপ্তমণির মন্দিরকে লোকে বলে বন দুর্গা বা বনদেবীর মন্দির। আর এই মন্দিরে দেবীর পুজো কোনও ব্রাহ্মণ করেন না। করেন শবর সম্প্রদায়ের মানুষরা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পুজো নিয়ে উন্মাদনা প্রচুর।
বহু বছর ধরে এক আশ্চর্য ইতিহাস বহু করে চলেছে ওই মন্দির। সেই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত একদিকে লোধা সম্প্রদায় ও অন্যদিকে রাজা নরসিংহ। জানা যায়, লোধা সম্প্রদায়ের তৎকালীন নন্দভুক্তা জঙ্গলে গবাদি পশু চড়াতে এসে গাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়েন। স্বপ্নে দেবী তাঁকে বলেন, সুখনিবাসের জঙ্গলে একটি পাথরের মূর্তি রয়েছে। সেটির পুজো শুরু করতে হবে লোধাপতিকে। পরদিন সুখনিবাসের জঙ্গলে গিয়ে দেবীর মূর্তিটি খুঁজে পান নন্দভুক্তা। সেখানেই পুজোর ব্যবস্থা করেন। আবার দৈব নির্দেশে ওই নন্দ ভুক্তাই খুঁজে দেন রাজার হারিয়ে যাওয়া হাতি। এই দুই ইতিহাস জড়িত ওই পুজোর সঙ্গে। রাজা সুখনিবাসের জঙ্গল নন্দভুক্তা ও তাঁর সম্প্রদায়কে দান করেন। নিদান দেন দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠার। সেই থেকে লোধা শবররা নিজেদের মতো করে দেবী গুপ্তমণির পুজো করে আসছেন। কিংবদন্তি, দেবী নাকি গাছের গুঁড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। তাই তাঁর নাম হয়েছিল গুপ্তমণি। আবার জায়গাটি রাজার গুপ্তস্থান ছিল। সেই কারণেও অনেকে মনে করেন যে রাজা জায়গাটির নাম দিয়েছিলেন গুপ্তমণি। সে যাইহোক, এখনও সেই নিয়ম মেনে বিগ্রহ পুজো হয়ে আসছে। মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে দেবী দুর্গার ছবি। দুর্গাপুজোর সময় বিগ্রহের সঙ্গে এই ছবিকেও পুজো করা হয়। এমনিতে প্রতিদিনই দেবীর পুজো হয়। দুপুর ১টার মধ্যে দেবী দুর্গাকে ভোগ নিবেদন করা হয়।