নিউজ ডেস্ক ::কলকাতার বিখ্যাত কালী মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম মন্দির ঠনঠনিয়া কালীমন্দির। শোনা যায়, ছোটবেলায় রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কলকাতায় আসেন, তখন এই এলাকাতেই থাকতেন। সেই সময় এই ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে এসে তিনি মা’কে গান শোনাতেন। এই মন্দিরে এসে রামকৃষ্ণ দেব যে বানী বলেছিলেন তা আজও মন্দিরের দেওয়ালে লেখা রয়েছে। সেটি হল ‘শঙ্করের হৃদয় মাঝে, কালি বিরাজে।’ প্রতিবছরই ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির মায়ের মূর্তি সংস্কার করা হয়। পূর্ণ তান্ত্রিক মতে পূজিত হন দেবী। এ মন্দিরে দেবী চতুর্ভুজা। গায়ের রং কালো। বাঁ দিকে দুই হাতে রয়েছে খড়্গ, নরকপাল। ডান দিকের দুই হাত রয়েছে অভয় মুদ্রা ও বরদা মুদ্রায়।
কিংবদন্তি অনুযায়ী,১৭০৩ খ্রীস্টাব্দে সাধক উদয় নারায়ণ ব্রহ্মচারীর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় এই কালী মন্দিরের। উদয় নারায়ণ নিজে একজন তান্ত্রিক ছিলেন। তিনি নিজের হাতে করে গড়ে তোলেন ঠনঠনিয়া কালী বাড়ির মাতৃ মূর্তি। মা এখানে পূজিত হন সিদ্ধেশ্বরী রূপে। মন্দির তৈরির প্রথম দিকে এর আকার বেশ ছোট ছিল। শোনা যায়, সেই সময় এই জায়গাটিও ছিল জঙ্গলে ভরা। এমনকি তখন সেরকম লোক-বসতি ছিল না মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে, শঙ্কর ঘোষ নতুন করে তৈরি করেন আজকের ঠনঠনিয়া কালী মন্দির। বর্তমান কলেজ স্ট্রিটের কাছেই গড়ে ওঠে ঠনঠনিয়া কালীমন্দির। আট চালার বিশেষ পুষ্পেশ্বর শিবের মন্দির তৈরি করেন। এই মন্দিরের নিত্য সেবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন শঙ্কর ঘোষ। বর্তমানে তাঁর বংশধরেরাই এই মন্দিরের সেবায়েত।
এই মন্দিরের সঙ্গে রামকৃষ্ণ দেবের সম্পর্ক খুব নিবিড়। রামকৃষ্ণদেব তাঁর ভক্তদের বলতেন ঠনঠনিয়ার কালী বড় জাগ্রত। তিনি ব্রহ্মানন্দ কেশব চন্দ্র সেনের আরোগ্য কামনায় এখানে ডাব-চিনির নৈবেদ্য দিয়ে পুজোও দিয়েছিলেন। রামকৃষ্ণদেব যখন অসুস্থ শরীর নিয়ে শ্যামপুকুরে থাকতেন, তখনও এই মন্দিরেই তাঁর ভক্তরা আরোগ্য কামনায় পুজো দিয়েছিলেন। জানা যায়, প্রথম দিকে জঙ্গলে ভরা ওই জায়গায় সারাদিন ধরে পুজো হতো ও ঠন ঠন করে ঘন্টা বাজানো হতো। বহুদূর থেকে সেই শব্দ শোনা যেতো। তাই থেকেই নাকি ওই অঞ্চলের নাম হয় ঠনঠনিয়া।