অক্সফোর্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি, বিরোধীদের কটাক্ষ মমতার

নিউজ ডেস্ক ::অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ চলাকালীন শ্রোতাদের মধ্যে কয়েকজন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘এই বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
একজন শ্রোতা জানতে চান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে কেন শুধুমাত্র সংখ্যালঘুদের উল্লেখ রয়েছে?’’ এই প্রশ্নের জবাবে মমতা স্পষ্ট জানান, ‘‘আমি সকলের মুখ্যমন্ত্রী। হিন্দু, মুসলিম, শিখ—সব সম্প্রদায়ের কথাই বলি। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কথা বলি।’’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করে না, বরং সর্বধর্ম সমন্বয়ের নীতিতে বিশ্বাসী।
পরিকল্পিত প্রতিবাদ ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সময় বারবার হট্টগোল তৈরি হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মনে করেন, এটি তৃণমূল-বিরোধী শক্তির পরিকল্পিত কৌশল। তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘আপনাদের নেতারা যখন আসবেন, তখনও কিন্তু একই জিনিস হবে।’’ তাঁর ইঙ্গিত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা যদি তৃণমূলের বিরোধিতায় মাঠে নামে, তবে তাদেরও একই প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে।
কেলগের প্রেক্ষাগৃহে যাঁরা লাগাতার প্রশ্ন তুলছিলেন, তাঁরা আসলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও মর্যাদাকে অসম্মান করেছেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা বিরোধিতা করতেই পারেন, আমি এতে উৎসাহ পাই।’’ অর্থাৎ, সমালোচনা বা প্রশ্ন তোলাকে তিনি স্বাভাবিকভাবে নিলেও, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশৃঙ্খলাকে সমর্থন করেন না।
রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে ফের একবার রাজ্য রাজনীতির উত্তেজনার ছবি ফুটে উঠল। বিরোধীরা যেখানে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ আনছেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘সকলের’ নেতা হিসেবেই তুলে ধরতে চাইছেন। তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা দেখে বিরোধীরা পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর দাবি, মমতার ভাষণে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা রাজ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিজেপির এক নেতার মতে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সকলের জন্য কাজ করছেন বললে ভালো শোনায়, কিন্তু বাস্তবে সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করা হচ্ছে।’’
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ ঘিরে বিতর্ক, বিরোধীদের প্রশ্ন, সরকারের পাল্টা প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। সামনের নির্বাচনকে ঘিরে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *