জগদ্দলে সংঘর্ষ, গুলি ও বোমাবাজি: অর্জুন সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের

নিউজ ডেস্ক ::জগদ্দলের মেঘনা মোড় সংলগ্ন এলাকায় বুধবার রাতে এক শ্রমিককে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সূত্রপাত হয় মেঘনা জুটমিলের মধ্যে, যেখানে এক শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল ছড়িয়ে পড়ে মিলের বাইরেও। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, সেখানে গুলি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম সরাসরি অভিযোগ তোলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে।

বুধবার রাত থেকেই ওই এলাকায় কড়া পুলিশি টহলদারি শুরু হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অর্জুন সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের

এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার পুলিশ অর্জুন সিংকে দু’বার নোটিস পাঠিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে। কিন্তু তিনি থানায় হাজির না হওয়ায় বিকেলে বিশাল পুলিশ বাহিনী তাঁর বাড়ি ‘মজদুর ভবন’-এ গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জগদ্দল থানার আইসি মধুসূদন মণ্ডলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম বিকেল পাঁচটা নাগাদ সেখানে পৌঁছয়। প্রথমে একতলা থেকে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়, এরপর দোতলায় তাঁর অফিসে বসিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অর্জুন সিং বলেন, ‘‘আমি ৩০ বছর ধরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক রাখি, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনোদিন গুলি চালাইনি। রাত দশটা কুড়ি নাগাদ গোলমালের খবর পাই এবং শব্দ শুনে বেরিয়ে আসি। মেঘনা মিলের গেটে যখন পৌঁছই, তখন সেখানে কেউ ছিল না। শুধু একটি ছেলে আহত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমি তাকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলি। মিলের গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করলেই স্পষ্ট হবে আমি কী করছিলাম।’’

সংঘর্ষের বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বুধবার রাতে মেঘনা জুটমিলের মধ্যে এক শ্রমিককে অর্জুন সিংয়ের অনুগামীরা মারধর করছিল বলে অভিযোগ ওঠে। শ্রমিকের পরিবার ও কিছু স্থানীয় বাসিন্দা তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, সেই সময় অর্জুন সিং দলবল নিয়ে বাঁশ, লাঠি, বোমা ও বন্দুক নিয়ে হামলা চালান। এলাকায় কয়েক রাউন্ড গুলি ও বোমাবাজি হয়। গুলিবিদ্ধ হন স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনীতা সিংয়ের ছেলে নমিত সিংয়ের সঙ্গে থাকা মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে মইনুদ্দিন। তাঁর পায়ে গুলি লাগে এবং মাথাতেও আঘাত করা হয়। বর্তমানে তিনি কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয় বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। তিনি স্পষ্ট অভিযোগ করেন, ‘‘অর্জুন সিং গুলি চালিয়েছেন এবং তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি তাঁকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’’

ভিডিয়ো ফুটেজ এবং পুলিশের প্রশ্ন

ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর) গণেশ বিশ্বাস একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, অর্জুন সিং নিরাপত্তারক্ষী এবং দলবল নিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। অনেকের হাতেই লাঠি ও বাঁশ রয়েছে। পুলিশের প্রশ্ন, ‘‘রাতের অন্ধকারে লাঠি, বাঁশ হাতে নিয়ে অর্জুন সিং ওই মিলের গেটে কী করতে গিয়েছিলেন?’’

সাংসদ পার্থ ভৌমিকের প্রতিক্রিয়া

জগদ্দলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘জগদ্দল এবং ভাটপাড়াকে নতুন করে অশান্ত করার চেষ্টা করছে অর্জুন সিং। আমরা এই গুন্ডারাজ বরদাস্ত করব না।’’

গ্রেপ্তার ও পরবর্তী পদক্ষেপ

এই ঘটনার জেরে পুলিশ এখনও পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার ধৃতদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর জানিয়েছেন, ‘‘গুলিবিদ্ধ যুবক বয়ান দিয়েছেন যে, অর্জুন সিংয়ের গুলিতেই তিনি আহত হয়েছেন। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চালাচ্ছি।’’

অশান্ত জগদ্দল: পুলিশের চ্যালেঞ্জ

গত ২৪ ঘণ্টার ঘটনাবলির পর জগদ্দল এবং আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে এবং তাঁরা দ্রুত শান্তি ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের তরফে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও, পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *