যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত উপাচার্যহীন

নিউজ ডেস্ক ::যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্তকে নির্ধারিত সময়ের আগেই সরিয়ে দিল রাজভবন। ৩১ মার্চ তাঁর অধ্যাপক হিসেবে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, তার আগেই ২৭ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, তিনি আর উপাচার্য পদে থাকছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোসের অনুমোদনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজভবনের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘‘২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্তকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এই বিজ্ঞপ্তি জারির সময় থেকেই তা কার্যকর হবে। আচার্যের অনুমোদনে এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে।’’ একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে এই মর্মে আনুষ্ঠানিক নির্দেশিকাও পাঠানো হয়েছে।

ভাস্কর গুপ্তের প্রতিক্রিয়া

রাজভবনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্বয়ং ভাস্কর গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল আমি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। চার দিন আগে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হল। ৩১ তারিখ পর্যন্ত আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে থাকব। আমি যত দিন উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলাম, যাদবপুরের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করেছি।’’

তবে হঠাৎ এই অপসারণের পিছনে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কারণ রয়েছে কি না, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।

উপাচার্যহীন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

ভাস্কর গুপ্তের অপসারণের ফলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত উপাচার্যহীন হয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যপাল ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। তবে এখনও ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ বাকি রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম যাদবপুর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য কে হবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

রাজ্যের প্রতিক্রিয়া

এই বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রভারতী থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়— যেভাবে অচলাবস্থা এগিয়েছে, যাদবপুরও সেই পথে এগোচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তালিকা থেকে একজনকে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যেত। কিন্তু রাজ্যপাল সেটা করলেন না। বরং তিনি অচলাবস্থা তৈরি করলেন।’’

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

এখন প্রশ্ন উঠছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপাচার্য কবে নিয়োগ হবে? রাজ্য ও রাজভবনের মধ্যে সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের জেরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছেন, দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে প্রশাসনিক জটিলতা আরও বাড়বে।

তবে রাজভবনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে, যাদবপুরের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *