সুন্দরবন – জল ও জঙ্গল যাদের একমাত্র রোজগারের পথ – একটি প্রতিবেদন

নিউজ ডেস্ক ::’সুন্দরবন’ নামটা শুনেই মনে পড়ে সেই প্রবাদ -‘ জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।’ আর দুই ২৪ পরগনার কয়েক লক্ষ মানুষের বাস সেই ভয়াবহ সুন্দরবনে। তারা জল ও জঙ্গলের সঙ্গেই যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। এখানে কোনও বড় কারখানা নেই। মানুষের একমাত্র ভরসা নদী, জঙ্গল ও প্রকৃতি। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার মানুষদের সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। পুরুষ, নারী সহ পরিবারের সদস্যরা ছোট ছোট কাঠের নৌকা বেয়ে নদীর বুকে নেমে পড়েন। তাঁদের সম্বল মাছ ধরার জাল, বাঁশের ফাঁদ ও বুকভরা সাহস। মাছ-কাঁকড়া ধরে তাঁদের সংসারের হাঁড়ি চড়ে। আবার এই নদী-জঙ্গলই তাঁদের জন্য মরণফাঁদ। কারণ এখানে প্রতিনিয়ত লুকিয়ে থাকে ভয়ঙ্কর বন্য প্রাণীর ছায়া।

ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট-এর বাস্তুতন্ত্র ঠিক রাখতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অবশ্যই অপরিহার্য। আর এখানকার সবচেয়ে বড় আতঙ্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসা সেই বাঘ মুহূর্তেই মৎস্যজীবীদের টেনে নিয়ে যেতে পারে। আবার নদীর বুকে ঘাপটি মেরে থাকে কুমির। তাঁর হামলায় এক নিমেষে শেষ হয়ে যেতে পারে জীবন। তবু ভয়কে জয় করে, বুকে পাথর চাপা দিয়ে প্রতিদিন সুন্দরবনের মানুষকে নদীতে নামতে হয়। শুধু মাছ-কাঁকড়া ধরা নয়, সুন্দরবনের বহু পুরুষ দল বেঁধে জঙ্গলের গভীরে মৌমাছির বাসা থেকে মধু সংগ্রহ করতে যান। তাঁদের বলা হয় মৌয়াল বা মৌলে। মৌচাক থেকে মধু তোলা যেমন আয়ের বড় উৎস, তেমনই বিপদ সংকুল। আজ পর্যন্ত কত মৌলে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন তার হিসেব হয়তো কেউ রাখে না। তবুও তাঁরা থামেন না। কারণ এই মধুই তাঁদের জীবনের আশার আলো। ঋতুতে ঋতুতে সংগ্রামের চেহারা আলাদা আলাদা। গ্রীষ্মে জল কমলে শুরু হয় মাছ ধরা, বর্ষায় জোয়ারের টানে দূরে দূরে ভেসে যায় নৌকা এবং শীতে কাঁকড়া ধরার মরসুমে জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে যায় বহু পরিবার। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় জঙ্গলেই চলে সুন্দরবনের মানুষের জীবনযুদ্ধ। জঙ্গলই তাঁদের একমাত্র ভরসা। এভাবেই তীব্র জীবনযুদ্ধের মধ্যেও তারা বেঁচে আছে ও পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *