৮১ নং জাতীয় সড়কের সামসীতে বাইপাসের জন্য উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো দাবি করলেন ন্যায্য ক্ষতিপূরনের

0 0
Read Time:6 Minute, 3 Second

মালদা;13জুন: জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে জমি,বাড়ি, ব্যবসায়িক স্থল। দু’বছর আগে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় মালদার রতুয়া-১ ব্লকের সামসি পঞ্চায়েতের ধরমকাঁটা এলাকায়। ফসলের জমি নিয়ে কোন সমস্যা না হলেও বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক কাঠামো সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে আপত্তি ছিল বাসিন্দাদের। বাজারমূল্য অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় বেঁকে বসেছিলেন বাসিন্দারা। কেউ কেউ অবশ্য ক্ষতিপূরনের চেক নিয়ে অন্যত্র সরে পড়েছেন। তবে, রীতিমতো হাইকোর্টে মামলা করে ন্যায্য বিচারের আশায় দিন গুনছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম ওরফে হীরালাল। লকডাউনের আগে তার আবেদনে সাড়া না দিয়ে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাসিন্দাদের প্রবল আপত্তিতে তখনকার মত পিছু হঠে তারা। এদিকে লকডাউনের সময় অন্যান্য সবকিছুর মত বন্ধ ছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে, মামলার শুনানি আটকে থাকে। লকডাউন শিথিল হতেই ফের উচ্ছেদ অভিযানে নামে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে জেলাশাসকের কাছে আবেদন করে আবদুল হাকিম জানান, হাইকোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যাতে তার বসবাসের একমাত্র সম্বল বাড়িটি যাতে না ভাঙা হয়। বিষয়টি জেলাশাসক পুলিশ সুপার ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে পর্যালোচনা করার জন্য নির্দেশ দেন। তবুও গত শুক্রবার থেকে আবদুল হাকিম ওরফে হীরালালবাবুর বাড়িটি ভাঙা শুরু করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। হীরালালবাবু সাংবাদিকদের জানান, তার পরিবার ন্যায্য ক্ষতিপূরণের জন্য জলপাইগুড়ি ডিভিশনের আরবিট্রেশন, মালদা জেলা আদালত, কলকাতা হাইকোর্ট, এমনকি সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের করেছেন। এলাকার অন্যান্য বাসীন্দারাও পরে এই মামলার সাথে যুক্ত হয়েছেন।

বাসীন্দাদের অভিযোগ, জমি ও বাড়ির বিনিময়ে যে দর পাওয়া উচিত ছিল তার থেকে অনেক কম দরে তাদের জমি কেনা হয়েছে।ফলে তারা নিজেদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে গড়িমসি করছিলেন। অবশ্য, অনেকেই নতুন জায়গায় বাড়িঘর স্থানান্তরিত করে চলে গিয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়িক স্থল, গুদামঘর এবং বসতবাড়ি ছেড়ে অনেকেই যেতে চাইছিলেন না বলে অভিযোগ। ফলে, শুক্রবার থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদা সাবডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার তিমির বরণ সাহার উপস্থিতিতে শুরু হয় জেসিবির মাধ্যমে বড় বড় পাকা ভেঙে ফেলার কাজ। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতে তার বাড়ির মালপত্র নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ করেছেন আবদুল হাকিম, আবদুর রাকিবেরা। প্রশাসন, আরবিট্রেশন ও মহামান্য উচ্চ ন্যায়ালয়ে আবেদন করেও এখনো তারা সুবিচার পাননি বলে জানিয়েছেন বাসীন্দারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদা সাবডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার তিমির বরণ সাহা জানান, দু’বছর আগে জমিগুলো অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরনও পেয়ে গিয়েছেন। তথাপি তারা জায়গা খালি করছিলেন না। তাদেরকে ছয় মাস আগে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এমনকি দুই সপ্তাহ আগেও বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করা হয়েছে। তাতেও তারা কর্ণপাত করেননি। ফলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই বাড়ীঘরগুলো ভেঙ্গে ফেলছে। বাড়িঘর যাদের ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের মধ্যে চিকিৎসক ইমদাদুল ইসলাম, হীরালালদের অভিযোগ, আমরা জমির ন্যায্যমূল্য পাইনি। বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে সময় চেয়েছিলাম। সঠিক মূল্য নির্ধারণের জন্য মামলাও চলছে। তবুও আমাদের কোন কিছু না জানিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলল। আমরা হঠাৎ এখন মালপত্র নিয়ে কোথায় যাব। সিদ্ধার্থ রায় নামে আর এক ব্যবসায়ী জানান, আমরা বাণিজ্যিক ভবনের পরিবর্তে টাকা পেয়েছি বটে তবে ব্যবসা করার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পাইনি। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করেছি। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!