আধুনিকতা আর ইন্টারনেট যুগে উৎকর্ষতায় বর্তমানে “ছনের ঘর” বিলুপ্তির পথে বললেই চলে

0 0
Read Time:4 Minute, 23 Second

নিউজ ডেস্ক::জানা যায়, ঢেউটিন এবং পাকা দালান ঘর শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই দিন দিন ঘর বাড়ছে। ফলে নতুন করে “ছনের ঘর” খুব কম হচ্ছে। আবার ছনের ঘর সংস্কারও হচ্ছে খুব কম। তবে ত্রিপুরার প্রত্যন্ত পাহাড়ি উপজাতি এলাকায় এখনো ছনের ঘর লক্ষ্য করা যায়। এমন চিত্র শুধুমাত্র ত্রিপুরা তেলিয়ামুড়া মহকুমা মুঙ্গিয়াকামি আর. ডি. ব্লকের অধীন আঠারোমুড়া সহ বিভিন্ন উপজাতি এলাকাগুলিতেই দেখা যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ লক্ষ্য করা যায় ছনের ব্যবহার বিভিন্ন প্রত্যন্ত উপজাতি এলাকায়। উপজাতি জুমিয়া পরিবারগুলি জুম চাষের জমিতে ছন বাঁশ দিয়ে টং বানাতে দেখা যায়। কিন্তু, ছনের ব্যবহার বিগত দিনগুলি তুলনায় বর্তমানে খুবই কম দেখা যায়। ত্রিপুরা আঠারোমুড়া পাহাড়ের জঙ্গলে ছনের উৎপাদন খুবই কম।

আর যা পাওয়া যায় তাও পাঁচগুণ দামে কিনতে হয়। এমনকি এমন অনেক উপজাতি পরিবার ছিল যারা ছন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু পাহাড়ের জঙ্গলে ছনের উৎপাদন কম হওয়াতে অনেক উপজাতি ছন ব্যবসায়ীরা ছন বিক্রীর ব্যবসা ও ছেড়ে দিয়েছে। বিগত দিনগুলিতে ডিসেম্বর মাস থেকে হাট-বাজারে ছন আসা শুরু হত। শীতকাল শুরু হতে গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু করে শহরের ঘর বাড়িতে ছাউনি হিসাবে ছনের ব্যবহারের ধুম পড়ে যেত। প্রায় পরিবারই ছিলো তখন ছনের উপর নির্ভরশীল। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত উপজাতি জনপদ এলাকার লোকেরা জ্বালানি এবং গরু-মহিষের খাদ্য হিসাবে ছন ব্যবহার করেছে। কিন্তু কালক্রমে গরীবের ছাউনি সেই ছন হারিয়ে যেতে বসেছে। এক উপজাতি ব্যক্তি জানান, বিগত দিনগুলিতে ত্রিপুর আঠারমুড়া পাহাড়ে ছন পাওয়া যেত সবসময়। এই ছনের উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে জানা গেছে, পাহাড়ের জঙ্গলে এখন আর সেরকম ছন পাওয়া যায় না। বহু গভীর জঙ্গল থেকে ছন সংগ্রহ করতে হয়। একই পাহাড়ে ফলজ ও বনজ গাছের পাশাপাশি ছনও হত। বিভিন্ন কারণে পাহাড় ধ্বংসের কারণে এবং রীতিমত পাহাড় পরিষ্কার না করার কারণে পাহাড়ে ছন বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে।


পর পর দু‘বার ছন না কাটলে সেই পাহাড়ে আর ছন হয় না। প্রতি বছর ছন কাটলে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিলে ছনের ভালো উৎপাদন হয়। আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ছন-এর চাষ করা হয়ে থাকে। চাষাবাদে তেমন পরিশ্রম নেই। শুধুমাত্র পাহাড়ের যে অংশে ছন চাষ করা হবে তা পরিষ্কার করে দিলেই কিছুদিন পর প্রাকৃতিক ভাবেই ছনের কুঁড়ি জন্ম নেয়। এরপর ছনের দৈর্ঘ্য দেড় দুই হাত হলে আগাছা পরিষ্কার করে একবার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। আর ৬ থেকে ৭ ফুট লম্বা হলেই ছন কাটার উপযুক্ত হয়। ছন চাষের পর পর পর্যাপ্ত রোদে ১৫ থেকে ২৫ দিন শুকিয়ে নিলে এরপরই তা ব্যবহার উপযোগী হয়। তবে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন, ছন দিয়ে নানাবিধ ব্যবহার বাড়ানো গেলে হয়তো ছনের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। এবং ছন চাষ করে অনেক চাষীরাই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতো।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!