ভারতের প্রাক্তন অলরাউন্ডার সেলিম দুরানি প্রয়াত!
নিউজ ডেস্ক::সেলিম দুরানি প্রয়াত। ভারতীয় ক্রিকেট দলের তারকা অলরাউন্ডারের জীবনের ইনিংস থামল ৮৮-তে। আফগানিস্তানে জন্মে ভারতের হয়ে খেলা তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার। জন্ম কাবুলে। সেলিম দুরানি ভাই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থাকতেন গুজরাতের জামনগরে। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে ভারতের প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটাররা।
সেলিম দুরানির প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৫৩-৫৪ মরশুমে। ১৯৬০ সালে মুম্বইয়ের ব্র্যাবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক। শেষ টেস্টটিও খেলেন ব্র্যাবোর্নে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালে। শেষ টেস্টে ৭৩ ও ৩৭ রান করেছিলেন। তার আগে কানপুর টেস্টে প্রথম একাদশে ছিলেন না। তাঁকে দলে ফেরানোর দাবিতে যে স্লোগানটি তখন জনপ্রিয় হয়েছিল তা হলো- নো দুরানি নো টেস্ট।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোকবার্তায় লিখেছেন, সেলিম দুরানিজি-র সঙ্গে গুজরাতের বহু বছরের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সৌরাষ্ট্র ও গুজরাতের হয়ে খেলেছেন। গুজরাতকেই নিজের ঘর বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। ব্যক্তিত্বের বহুমুখিতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর অভাব অনুভূত হবে। এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার নিজেই ছিলেন এক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের উত্থানে অবদান রেখেছেন। মাঠ ও মাঠের বাইরে তাঁর নিজস্ব স্টাইল ছিল।
বাঁ-হাতি ব্যাটার, বলও করতেন বাঁ হাতে। কখনও ব্যাট হাতে, কখনও দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে জিতিয়েছেন। দেশের হয়ে ২৯টি টেস্ট খেলেছেন। ১২০২ রান করেছেন। ৭৫ উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। একটি শতরান ও পাঁচটি অর্ধশতরান করেছেন। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারত টেস্ট জিতেছিল তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ে। সেই টেস্টে সুনীল গাভাসকরের অভিষেক হয়েছিল। কয়েক বলের ব্যবধানে ক্লাইভ লয়েডকে আউট করার পর শূন্য রানে ফেরান গ্যারি সোবার্সকে।
পোর্ট অব স্পেনে দ্বিতীয় ইনিংসে এই গুরুত্বপূর্ণ উইকেটগুলি দুরানি তুলে নেওয়ায় ভারত সাত উইকেটে টেস্ট জিততে পেরেছিল। ১৭ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচ করেছিলেন দুরানি। ১৯৬১-৬২ মরশুমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়েও তিনি অবদান রাখেন। কলকাতা ও চেন্নাই টেস্টে নিয়েছিলেন যথাক্রমে ৮ ও ১০ উইকেট। কেরিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সিরিজে ৯ ইনিংসে ২৩ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেটশিকারী হন।
১৯৩৪ সালে জন্ম। গ্ল্যামারাস, দীর্ঘদেহী দুরানি সমর্থকদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন। দর্শকরা ছক্কা মারার আর্জি জানালেই ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতেন। এক সাক্ষাৎকারে দুরানি বলেছিলেন, দর্শকদের কথায় ছক্কা মেরেছি তা নয়। সেটা করা কঠিন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ৬-৭ বার এমনটা হয়েছে। বাবা আবদুল আজিজ ছিলেন ক্রিকেটার। ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৩৫-৩৬ মরশুমে সিকে নাইডুর দলের হয়ে আনঅফিসিয়াল টেস্টও খেলেন।
১৯৫৯-৬০ মরশুমে কানপুরে ভারত প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল টেস্টে। সেই টেস্টে জশু প্যাটেলের বোলিং ভারতকে জেতায়। যদিও পরের টেস্টে খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরে খেলতে পারেননি জশু, তাঁর জায়গাতেই দুরানির অভিষেক। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেলিম দুরানি পান অর্জুন পুরস্কার। প্রিন্স সেলিম নামে জনপ্রিয় ছিলেন। বলিউডে অভিনয়ও করেছিলেন। পরভীন ববির বিপরীতে তিনি অভিনয় করেছিলেন চরিত্র ছবিতে।