এ এক অন্য নারীর গল্প

0 0
Read Time:5 Minute, 46 Second

নিউজ ডেস্কঃ ‘হরমন থেরাপি’ বা ‘লিঙ্গান্তর’ শব্দগুলো ইদানিং খুব প্রচলিত। কিন্তু এই শব্দগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া কিন্তু মোটেই সহজ বিষয় নয়। এর সঙ্গে শুধু শরীর যুক্ত নয়, যুক্ত দীর্ঘ মানসিক প্রক্রিয়া। আমরা জানি প্রকৃতি নারী ও পুরুষকে পৃথকে করেছে কিছু পৃথকে হরমনের সাহায্যে। এই গল্পে আসার আগে ভূমিকা স্বরূপ একটু বলে রাখি, – টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের। অন্য দিকে ইস্ট্রোজেন হল প্রাথমিক নারী লিঙ্গ নির্ধারক হরমোন । এখন একটি শিশু জন্ম নেওয়ার পর সে পুরুষ হোক বা নারী নিজেদের স্বাভাবিক হরমন অনুযায়ী সমাজের বুকে বড়ো হয় ও নারী বা পুরুষ বলে চিহ্নত হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণেই অনেক সময় ঘটে বিপর্যয়।

অর্থাৎ শারীরিকভাবে একটি শিশু নারী বা পুরুষের দৈহিক রূপ নিয়ে জন্মলো কিন্তু হরমনের বিভাজন উল্টো হলো। এতে প্রাথমিকভাবে কোনো অসুবিধা না হলেও অসুবিধা শুরু হয় শিশুকাল থেকে তার আচার আচরণে আর বয়সন্ধির সময় থেকে। এই সময় থেকে মানুষের সেক্স হরমন কাজ করা শুরু করে। এটা খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। তবু এই পৃথিবীতে এমন নজির বহু আছে।

  আর আমাদের আজকের 'এক অন্য নারীর গল্প' সেই হরমন নিয়েই। এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ইলা দেব বর্মা। এই ইলা জন্মসূত্রে একজন পুরুষ বা ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যেত। পড়াশুনায় যথেষ্ট মেধাবী। গান, খেলাধুলা, থিয়েটার ভালোবাসত।

কিন্তু শিশুকাল থেকেই একটা অদ্ভুত বিষয় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাহল ইলা মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভালোবাসে। মেয়েদের খেলা, পোশাক পারতে ভালোবাসে। শিশুকাল থেকে ইলা (যে শারীরিকভাবে একজন পুরুষ ) নিজের ভিতরে এই বিষয়টি অনুভব করত। অভিভাবকেরা প্রথমিকভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায় নি। কিন্তু বয়সন্ধিকালে ইলা শরীরে অন্য এক অনুভূতি অনুভব করতে থাকে। তার এই মর্মবেদনা সে কারোর সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। নিজে একা একা যন্ত্রনাময় জীবন যাপন করে চলে।

শেষ পর্যন্ত সেই সুদর্শন ছেলেটি একদিন তার মাকে সমস্ত ঘটনা বলে। মা ও বাবা চিন্তিত হয়ে একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও নিজেদের ছেলেকে হরমন থেরাপি করিয়ে নারীতে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইলার বাবা মেয়েকে অস্ট্রিলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে এক নতুন জীবন উপহার দিতে চায়। আর ঠিকই তখনি পৃথিবীর উপর নেমে আসে করোনার থাবা। ফলে লকডাউন ও ইলার গৃহবন্দি জীবন। সে এক গভীর মর্ম যন্ত্রণার জীবন। চোখের জল ছাড়া ইলার আর কোনো সান্ত্বনা নেই।

এই ইলার বয়স এখন ২৫ বছর। ১৯৯৮ সালের ২৫ আগস্ট তার জন্ম। ইলার বয়স যখন প্রায় ১৪ তখন থেকেই ইলার শারীরিক যন্ত্রনা যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই বিশ্বে ও তখন একদম একা। লকডাউনে ইলা একাকিত্ব কাটানোর জন্য ঢুকে পড়ে ইনস্টাগ্রামে। আলাপ পরিচয় হয় অনেকের সাথে। নেট জগৎ থেকে সে পেয়ে যায় অনেক নতুন বন্ধু। কিন্তু তবু মনের কোনে জমে থাকা যন্ত্রনা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে। সেই লকডাউনের সময় ইলা যোগাযোগ করে তার আরও কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে। নিয়মিত চলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ। চিকিৎসকের পরামর্শএ একাধিক সাইক্রিয়াটিস্ট এর সঙ্গেও ইলার কথা হয়। কাউন্সিলিং হয়। কিন্তু ইলা কিছুতেই শান্তি পায় না।

একটা সময় যখন ইলা হরমন থেরাপির কথা ভাবা শুরু করে তখন আরেক যন্ত্রনা তার মাথায় চেপে বসে। সমাজ! ইলার সমাজ! এই বৃহত্তর মানব সমাজ কিভাবে বিষয়টাকে নেবে? কিভাবে তাকে গ্রহণ করবে? কিন্তু সব সংশয় কাটিয়ে দৃঢ় মনে ইলা শেষ পর্যন্ত লিঙ্গান্তর করে এই দেশের মাটিতেই। এখন ২৫ বছরের এক তরুনি খুবই সুদর্শনা। তার সমস্ত শরীরে নারীর লালিত্য খেলা করছে। সে এখন খুব খুশি। ইলা জানায় এখন মডেলিং জগৎ তাকে নিয়মিত ডাকছে। ইলা খুঁজে পেয়েছে তার বহুদিনের কাঙ্খিত জীবন। ইলা খুশি, খুশি ওর বাবা মা, আর খুশি আমরা সকলে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!