প্রাচীন অলিম্পিক গেমস

0 0
Read Time:7 Minute, 5 Second

নিউজ ডেস্ক ::আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বা অলিম্পিক গেমস (ইংরেজি: Olympic Games ফরাসি: Jeux olympiques) হলো একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যেখানে গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীরা বিভিন্ন ধরনের খেলায় অংশগ্রহণ করে। দুইশতাধিক দেশের অংশগ্রহণে মুখরিত এই অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ সম্মানজনক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অলিম্পিক গেমস প্রত্যেক চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর দুটো প্রকরণ গ্রীষ্ম এবং শীতকালীন প্রতিযোগিতা প্রত্যেক দুই বছর পর পর হয়ে থাকে, যার অর্থ দাঁড়ায় প্রায় প্রত্যেক দুই বছর পর পর অলিম্পিক গেমসের আসর অনুষ্ঠিত হয়। খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দিতে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া থেকে শুরু হওয়া প্রাচীন অলিম্পিক গেমস থেকেই মূলত আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ধারণা জন্মে। ১৮৯৪ সালে ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) গঠন করেন। এই আইওসি-ই অলিম্পিক গেমস সংক্রান্ত সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

প্রাচীন গ্রীসে দেবতা জিউসের আবাসস্থল অলিম্পিয়ায় ধর্মীয় রীতি-রেওয়াজের সাথে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হত। মূলত প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরাই এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত। সাধারণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে মল্লযুদ্ধ, ঘোড়দৌড়, রথ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। প্রাচীন বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায় যে বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও এই প্রতিযোগিতা চলাকালে তা স্থগিত থাকত। এই যুদ্ধ এবং দ্বন্দ্বে সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়াকে “অলিম্পিকের যুদ্ধবিরতির নীতি” বলা হত। যদিও এই প্রাচীন ধারনাটি হয়ত একটি গল্পকথা কারণ গ্রীকরা কখনই যুদ্ধবিরতি করেনি। তবে এই রীতিটি অলিম্পিয়ামুখী তীর্থযাত্রীদের বিভিন্ন যুদ্ধরত নগর রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে অবাধে চলাচল করতে সাহায্য করত। কারণ তারা মনে করত যে জিউস সকল তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা করেন। অলিম্পিকের জন্ম আজও মানুষের কাছে একটি রহস্য এবং কিংবদন্তি হয়ে আছে। তবে জনপ্রিয় একটি গল্পকথা মতে দেবতা জিউস এবং তার ছেলে হেরাক্লিস বা হারকিউলিস এই অলিম্পিক গেমসের জনক।এই গল্পকথার মতে হেরাক্লিসই এই অনুষ্ঠানকে অলিম্পিক নাম দেন এবং প্রত্যেক চার বছর পর পর এই গেমস অনুষ্ঠানের প্রচলন করেন।

এই গল্পকথা অনুসারে হেরাক্লিস তার বারোটি মহাকাব্যিক অভিযান শেষে তার পিতা জিউসের সম্মানে অলিম্পিক স্টেডিয়াম তৈরী করেন। এই কাজ শেষ করার পরে হেরাক্লিস সোজা ২০০ কদম হেটে যান এবং একে স্টেডন হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে এটা দূরত্ব মাপার একক হিসেবে প্রচলিত হয়। অলিম্পিক সংক্রান্ত একটি প্রাচীন লিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে অলিম্পিকের সূচনা ঘটেছিল খৃষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালের দিকে। এই লিপিতে চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল। এই প্রাচীন ক্রীড়া অনুষ্ঠানে দৌড় প্রতিযোগিতা, মল্লযুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ এবং ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জানা যায়। লোকোগাথা মতে কোরিবাস নামের ইলিস শহরের এক পাচক অলিম্পিকের প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন।

মূলত অলিম্পিক ছিল ধর্মীয় আচার ও রীতি অনুযায়ী জিউস এবং অলিম্পিয়ার রাজা এবং পৌরানিক বীর পিলোপ্সকে সম্মান প্রদর্শনের একটি ঐতিহ্যগত ক্রীড়া অনুষ্ঠান। রাজা পিলোপ্স ওয়িনৌসের সাথে রথ প্রতিযোগিতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অলিম্পিকে বিজয়ীরা সম্মানে ভূষিত হতেন। তাদের উদ্দেশ্যে গান ও কবিতা লেখা হত। এই অনুষ্ঠান প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হত এবং এই চার বছরের সময়কালকে বলা হত এক অলিম্পিয়াড যা গ্রিকদের সময় পরিমাপার একটি একক ছিল।

খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ এবং পঞ্চম শতকে অলিম্পিক গেমস জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। কিন্তু, রোমের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্রীসের উপর এর প্রভাব বিস্তারের সাথে সাথে এর কার্যকারীতা হ্রাস পেতে শুরু করে। অলিম্পিক গেমসের কখন ইতি টানা হয় এর ব্যাপারে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া না গেলেও সাধারনভাবে মনে করা হয় যে ৩৯৩ খৃষ্টাব্দে এই ক্রিড়াযজ্ঞের সমাপ্তি হয় যখন সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস সমস্ত পৌত্তলিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেন। যদিও, থিওডোসিয়াসের আদেশে সরাসরি অলিম্পিকের কোনো উল্লেখ ছিল না। এছাড়া অনেকের ধারণা মতে দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস যখন ৪২৬ খৃষ্টাব্দে সমস্ত গ্রিক মন্দির ধ্বংশ করার আদেশ দেন তখনই এই গেমসের সমাপ্তি ঘটে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!