মুসলিম প্রধান আরবে বন্ধ অ্যাপার্টমেন্টে শুরু হয় দুর্গা পুজো
নিউজ ডেস্কঃ মুসলিম প্রধান সংযুক্ত আরম আমিরশাহী (ইউএই) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ মূর্তিপূজা। কিন্তু সেখানে বাস প্রায় ৩০০ বাঙালি পরিবারের। আইনের জন্য দুর্গাপুজো হবে না তা মানতে পারেনি আবেগপ্রবণ বাঙালিরা। তাই আইন যেমন আছে, তেমনই তার ফাঁক খুঁজে বের করলেন তাঁরা। এগিয়ে এলেন আর্ট ডিরেক্টার দেবাশিস মান্না ও তাঁর সঙ্গী হলেন দুজন বাঙালি মেয়ে, মহুয়া চক্রবর্তী এবং মৌসুমী মুখোপাধ্যায়। তিনজনে মিলে এঁকে ফেললেন সাঙ্গপাঙ্গ-সহ দুর্গার রূপ। মূর্তি পুজো নিষেধ, ছবি পুজোতে তো কোনও বাধা নেই! এঁরা কিন্তু কেউ কস্মিনকালেও ভারতে আসেননি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা আবুধাবিতেই। তৈরি করলেন বঙ্গ বাহিনী। কারও কাছে কোনওরকম অর্থ সাহায্য না চেয়ে একটি বন্ধ অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে শুরু হল পুজো।
তৈরি হয় পুজো কমিটি। গৌতম মণ্ডল, সুদীপ চক্রবর্তী, গৌরদাস ব্যানার্জি, অলোক মাইতি, শুভাশিস চ্যাটার্জি, মানস দাস মিলে তৈরি করলেন পূজা কমিটি। আবুধাবিই আরব এমিরেটসের একমাত্র শহর যেখানে দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। সেই সময় এক বাঙালি, দিলীপ রায়ের বাড়িতেই শুরু হয় এই পুজো। পরপর ৩ বছর তাঁরা এভাবেই চালিয়ে যান, যতক্ষণ না সরকারিভাবে অনুমতি পাচ্ছিলেন আরও বড়ো করে পুজো করার। তারপর সেখানে পুজো শুরু করে ইন্ডিয়ান সোশ্যাল ক্লাব। সে এক জমজমাট ব্যাপার। আশেপাশের দেশ বাহরিন, ওমান থেকেও বাঙালিরা ছুটে এসেছিল এই পুজোয় যোগ দিতে। কিন্তু ১৯৯০ সাল নাগাদ হঠাৎই নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় পুজো।
তারপর প্রায় এক যুগ বন্ধ ছিল মাতৃআরাধনা। অবশেষে আরব এমিরেটসের সমস্ত বাঙালিরা একজুট হয়ে তৈরি করে এক অ্যাসোসিয়েশন। নাম আহবংস (AUHBONGS)। শুরু হয় নতুন করে দুর্গোৎসব। উদ্যোগী ছিলেন আবুধাবির একজন বিশিষ্ট উদ্যোগপতি ড. বি আর শেঠী। তিনি নিজের উদ্যোগে আবুধাবির মন্ত্রিসভা থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড় করেন। নিজের হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হলটি দেন পুজোর জন্য। এই পুজোর প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস আসে কলকাতা থেকে। মূর্তির বদলে কখনো পেন্টিং বা গ্লাস পেন্টিং-এ মা দুর্গা ধরা দেন। ১৯৮৫ সালে যে পুজো বন্ধ অ্যাপার্টমেন্টে শুরু হয়েছিল মাত্র দু’শো পরিবারের মধ্যে, ২০১৬ সালে সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি। এখন আর শুধু আরব আমিরশাহীতেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালির পুজো ছড়িয়েছে ওমানের মাসকটসহ অন্যান্য দেশেও।