টাকা তুমি কার?
নিউজ ডেস্ক::ফ্ল্যাটে নগদ ৫০ কোটি, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি।
এছাড়া সোনা-দানা, গয়নাগাটি, সম্পত্তি বিস্তর! টাকার বেশিরভাগই অবশ্য পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু পার্থ-অর্পিতার অ্যাকাউন্টে যে বিশাল টাকা পাওয়া গিয়েছে? তারপরও অবশ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফলাও করে বলছেন, টারা আমার নয়, আমার নয়, আমার নয়।
তাহলে টাকা কার? কে উত্তর দেবে তার। বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্নরকম দাবি উঠেছে টাকা নিয়ে। সেই দাবির মধ্যেই প্রতিদিনই একটা একটা করে টাকার সামনে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। কেননা যাঁকে নিয়ে এই টাকার ঘনঘটা সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় জোকা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে বলেছেন, আমার টাকা নেই। টাকা আমার নয়। কোনওরকম টাকার লেনদেন আমি নেই। আমি কোনওদিন টাকা লেনদেন করি না।
এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী আবার ভিন্ন সুর গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, টাকা নেই বলে দায় ঝাড়তে পারবেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়ার পাল্টা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ওই টাকা রাখতে দিয়েছেন ভাইপো। তার অভিযোগ, অপা সিন্ডিকেটের মালিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর পরিচালনার নির্দেশ দিতেন ভাইপো।
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর অপা ওই টাকার কাস্টডিয়ান বা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, পার্থ-র নিজের এবং ভাইপোরও বহুও কালেক্টর রয়েছেন। যাঁরা টাকা সংগ্রহ করেন। তিনি একাধিক নেতার নামও জানান, যাঁরা টাকা সংগ্রহ করেন। মানস মজুমদার থেকে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের নামও ওঠে। বিনয় মিশ্রের মাধ্যমে ১২ কোটি টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি। শুভেন্দুর কথায়, এসব ব্যানার্জি-চ্যাটার্জির ষড়যন্ত্র।
আর কুণাল ঘোষ এই মর্মে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যেক কড়া সমালোচনা করে বলেন, নারদা মামলায় এফআইআর নেমড, সারদা-কর্তা নিজে অভিযোগ করেছেন তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে টাকা দিয়েছেন। তারপর ভয়ে ইডির হাত থেকে বাঁচতে বিজেপির পায়ের তলায় আশ্রয় নিয়েছে। একজন দুর্নীতিতে ডুবে থাকা চোর নেতা তাঁর মুখে এসব সমালোচনা মানায় না।
কুণাল ঘোষ আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘টাকা আমার নয়’ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রথম কয়েকদিনের ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করে দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর পার্থদা প্রথম চক্রান্ত বললেন না, নির্দোশ বললেন না, আমার টাকা নয় বললেন না। হঠাৎ গত দুদিন ধরে তিনি মন্তব্য করছেন। পার্থদা এখানে কী বলছেন তার উপর কোনও মন্তব্য করতে চাই না। উনি আজকে বলেছেন, এটা আমরা টাকা নয়। এটা চক্রান্ত। আবার কখন বলছেন সময় এলে বোঝা যাবে। কখনও বলবেন, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে চিনি না। আমি পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি না জানি না। এগুলোর রোজ উত্তর দেওয়া যায় না, দিচ্ছি না।
উল্লেখ, এসএসসি দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর প্রায় ৫৮ কোটি টাকার হদিশ মিলেছে। তারপর জোকা হাসপাতালে আদালতের নির্দেশে এক দিন অন্তর চেক আপ করতে এসে পার্থ চট্টোপাধ্যায় একটা একটা করে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আগে বলেছিলেন, কী কারণে মন্ত্রিত্ব ছাড়ব। তারপর বললেন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করেছেন। তারপর বললেন, ষড়যন্ত্র। এখন বলছেন আমার টাকা নয়। কারা ষড়যন্ত্র করছেন সময় এলেই জানতে পারবেন। তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে জল্পনা বাড়ছে, শুরু হয়েছে তা নিয়ে চর্চাও।