বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনেই মৃত্যু মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর এর এক পরিযায়ী শ্রমিকের।

0 0
Read Time:7 Minute, 23 Second

মালদা;31 মে: লকডাউন এর মধ্যে কাজ হারিয়ে ছিলেন। হাতে পয়সা কড়ি ছিল না কিছুই। টাকা পাঠাতে পারছিলেন না।ইচ্ছে ছিল এই দুঃসময়ে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কাটাবেন। কিন্তু নিয়তির পরিহাস ভিন রাজ্যে কর্মরত মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বাসিন্দা সেই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল চলন্ত ট্রেনের মধ্যে। শেষ দেখা হলো না বাড়িতে অপেক্ষারত স্ত্রী-পুত্র-কন্যা দের সঙ্গে। সেই দুর্ভাগা শ্রমিকের নাম বুধুয়া পরিহার। বয়স 48।বাড়ি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিশ্চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ব্লক পাড়ায়।জানা গেছে ট্রেনে ওঠার সময় তিনি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি দীর্ঘ দুই দশক ধরে রাজস্থানের বিকানের এ কর্মরত ছিলেন। রাজ্য থেকে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন প্রথমে রাজস্থানের বিকানের শহরে একটি হোটেলে কাজ করতেন। কিন্তু সেখান থেকে কাজ চলে যাওয়ার পরে। রাজস্থানের গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডিম সংগ্রহ করে সেই ডিম বিক্রি করতেন। বছরে পারতপক্ষে একবারই বাড়ি আসতে পারতেন। তার পাঠানো টাকাতেই চলতো সংসার। কিন্তু লকডাউন হওয়ার পর থেকেই বিকানের এ শহরে ঘরে বসেই দিন কাটাচ্ছিলেন বুধুয়া পরিহার। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না এই দুঃসময়ে। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ার পরই বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দেন। রাজস্থান থেকে গত শুক্রবার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন এ চাপেন মালদা আসার উদ্দেশ্যে। কানপুর ও এলাহাবাদ স্টেশন এর মাঝেই শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন ট্রেনের মধ্যে। ট্রেনের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুধুয়া পরিহার বলে সহযাত্রীদের সূত্রে খবর পান পরিবারের লোকেরা।

হরিশ্চন্দ্রপুর এর বাড়িতে বসে বুদুয়া বাবুর স্ত্রী শিখা পরিহার জানান গত শুক্রবার ট্রেনে ওঠার সময় আমার স্বামী আমাকে ফোন করেছিল। বলল খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। শেষ মেয়ের বিয়ের সময় বাড়ি এসেছিল। বিকানের শহরে ডিম বিক্রির পাশাপাশি রাতে নৈশ প্রহরীর কাজ। এই কাজ করে মাসে মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাত। এলাকায় কাজ না পেয়ে দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে রাজস্থানের কাজ করতো। বছরে একবার মাত্র বাড়ি আসতে পারতো। শ্রমিকের কাজ করি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে ও সহ-যাত্রীদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি আমার স্বামী মারা গিয়েছে। এখন কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

মৃত বুধুয়া পরিহারের ছেলে সুজন পরিহার জানালেন আমার বাবা দীর্ঘ কুড়ি বছর যাবত রাজস্থানে কাজ করতেন। গত শনিবার বাড়ি আসার জন্য ট্রেনে চেপে ছিলেন। বাবার পাঠানো টাকা দিয়ে সংসার চলত। বেশ কিছুদিন ধরে আমি এলাকায় টোটো চালাই। আমরা চাই প্রশাসন আমাদের পাশে দাঁড়াক।আমরা শুনেছি বাবার দেহ মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রাখা আছে। সেখানে লালা রস পরীক্ষার হওয়ার পরে পোস্টমর্টেম হবে।আমার বাবার শেষ কাজকর্ম যেন হরিশ্চন্দ্রপুর এর বুকে হয় এটাই আমাদের এখন একমাত্র প্রার্থনা সরকারের কাছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র দাস জানান এলাকায় ফ্যামিলিতে খুব গরিব। ওই বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য বুধুয়া পরিহার দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে রাজস্থানের থেকে বিভিন্ন রকম কাজ করে সংসারে টাকা পাঠাত। আমরা শুনেছিলাম সে বিশেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরছে। তারপর জানতে পারলাম তিনি অসুস্থ হয়ে ট্রেনে মারা গিয়েছে। এখন সে ট্রেনে কিভাবে মারা গেল সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
একমাত্র রোজগেরে সদস্যএর মৃত্যুতে পরিবারটি পথে বসেছে প্রায়। এখন এই অসহায় অবস্থায় প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক এটাই আমরা চাই।

মালদা জেলা পরিষদের শিশু নারী ও ত্রাণ কর্মদক্ষ মর্জিনা খাতুন জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ওই পরিবারটিকে যাতে সাহায্য করা যায় সে বিষয়টি দেখা হবে। স্থানীয় বিডিও কে আমি এই ব্যাপারটি দেখতে অনুরোধ করেছি।

এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ বসু জানিয়েছেন আমি শুনেছি স্থানীয় ওই শ্রমিক বুধুয়া পরিহার রাজস্থান থেকে বাড়ি ফেরার পথে মারা গেছেন। খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।তার দেহ এখন মালদা মেডিকেল কলেজের রাখা আছ। ইতিমধ্যেই লোক প্রশাসন থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করেছি ওনার পরিবারের লোকদের মালদা নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাছাড়াও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বৈতরণী প্রকল্পের মাধ্যমে ওনার সৎ কার্য সম্পন্ন হবে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য মারা যাওয়াতে ন্যাশনাল ফ্যামিলি বেনিফিট প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি ওই পরিবারকে এককালীন কিছু অর্থের ব্যবস্থা করানোর।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!