মুম্বাই থেকে ফিরে মৃত্যু ঘটলো কিশোর পরিযায়ী শ্রমিকের

0 0
Read Time:6 Minute, 24 Second

মালদা;২জুন: সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কিশোর বয়সেই মুম্বাই পাড়ি জমিয়েছিল মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মনোহরপুর গ্রামের বছর 15 এর কিশোর পীযূষ দাস। মুম্বাইতে পাইপ লাইনের কাজে লেবারের কাজ করত সে। লকডাউন এ কাজ হারিয়ে অনাহারে দিন কাটছিল মুম্বাইতে। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পেয়ে গত সপ্তাহে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।কিন্তু অভিযোগ ট্রেনে জোটেনি পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল। তার ফলে ট্রেন এ অসুস্থ হয়ে যায় কিশোর পীযূষ দাস। তিনদিন অর্ধাহারে ট্রেন সফরের পর হরিশ্চন্দ্রপুর এ এসেই বারদুয়ারী হাইস্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে চলে যায়। সেখানেই রবিবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয় সেখান থেকে তাকে স্থানীয় মশালদা হাসপাতাল ও পরে মালদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সোমবার রাত্রে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পীযূষ দাস এর মৃত্যু হয়। কিশোর শ্রমিক পীযূষ দাস এর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ছোট বয়সে বইপত্র ফেলে সংসার সামলাতে সে হাতুড়ি ধরে নিয়েছিল হাতে। গিয়েছিলে মুম্বাই পয়সা রোজগারের আশায়। ভেবেছিল পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবে।কিন্তু তার মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছাতেই গোটা গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মৃত্যুর দায় কে নেবে এই প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী থেকে আত্মীয়-পরিজন।
পীযূষ দাস এর মামা গাবলু দাস জানালেন গত ছয় মাস আগে সে মুম্বাইতে গেছিল। লকডাউন এর মধ্যে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছিল। তাই ওকে বাড়ি আসার জন্য পরিবার থেকে বলা হয়েছিল। গত সপ্তাহের ট্রেনে চেপে ছিল বাড়ি আসার জন্য। তাই অনাহারে এই কদিন ট্রেন জার্নির পরে বারদুয়ারী করেন্টিন সেন্টারে এসেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।সেখান থেকেই প্রথমে মশালদা হাসপাতাল তারপরেই তাকে মালদা হাসপাতালে রেফার করা হয়। গতকাল রাত্রে মারা গেছে। ওদের পরিবারটি খুবই গরীব। বাবা দীর্ঘদিন থেকে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। আমরা চাই এই মুহূর্তে প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক।

পীযূষ দাস এর কাকা বচ্চন দাস জানালেন গতকাল রাত্রে মালদা মেডিকেল কলেজে আমার ভাতিজা মারা গেছে। শুনেছি ওর লালা রস নেওয়া হয়েছে পোস্টমর্টেম ও হবে। আমরা চাই ওর দেহ আমাদের হাতে তুলে দেয়া হোক। আমরা ওর শেষকৃত্য করতে পারি এই গ্রামে নিয়ে এসে।সংসারের হাল ধরতে এসে এই ছোট বয়সে শ্রমিকের কাজ করতে সুদূর মুম্বাই চলে গিয়েছিল।লক ডাউন এর মধ্যে যে তার মরদেহ বাড়ি ফিরবে আমরা তা ভাবতে পারেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় দাশ জানালেন আমরা শুনেছি ছেলেটি ট্রেনে খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। তারপর এখানে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরে সেখানে অসুস্থতা বেড়ে যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা।আজকে জানতে পারলাম মালদা মেডিকেল কলেজের সে মারা গেছে। আমরা চাই প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক। এলাকায় পরিবারটি খুবই দরিদ্র শ্রেণীর।

জেলা পরিষদ এর শিশু নারী ও ত্রাণ কর্মাদক্ষ মর্জিনা খাতুন জানান বাইরে থেকে যারা বাংলায় ফিরছেন তাদের ব্যাপারে কেন্দ্র সরকারের আরও গুরুত্ব নেওয়া উচিত। রেল দপ্তর কেউ এদের খাবার দাবারের ব্যাপারে আরও সচেতন থাকা উচিত ছিল। আজ কেন্দ্র সরকারের উদাসীনতার জন্যই এত শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে। এর দায় কেন্দ্রকে নিতে হবে। আমি স্থানীয় প্রশাসন পক্ষ থেকে এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়াবো। আগামীতে আরো কিছু আর্থিক সাহায্য করা যায় কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।

হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নং ব্লকের ব্লক মেডিকেল অফিসার সাগর বসাক কে ফোনে ধরা হলে তিনি জানান গতকাল সকালেই পীযূষ দাস অসুস্থ অবস্থায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে এসেছিল। আমরা খবর পেয়ে তাকে প্রথমে মশালদা হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে অবস্থা খারাপ হলে মালদা মেডিকেল স্থানান্তর করা হয়। গতকাল রাত্রে সেখানেই সে মারা। এভাবে 15 বছরের কিশোর অকালে চলে যাওয়াটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। ওই ছেলেটি লালা রস সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম মালদা মেডিকেল করা হবে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!