বাবা-মা চাষী হওয়া সত্বেও উচ্চমাধ্যমিকের সাফল্যের রেজাল্ট ছেলের

0 0
Read Time:3 Minute, 53 Second

মালদা: বাবা চাষি, মাও অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেন৷ তাকে ঘাস কাটতে যেতে হয় বিভিন্ন জায়গায়৷ বাবা-মা’র অবর্তমানে বাড়িতে রান্নাও করতে হয় তাকে৷ সময় পেলে ঘরে থাকা সেলাই মেশিনে হাত চলে তার৷ দুটো পয়সা তো সেখান থেকেও আসে৷ এভাবেই পড়াশোনা চলছিল তার৷ এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সেই ছাত্রই পেয়েছে ৪৯৫ নম্বর৷ রাজ্যে সম্ভাব্য পঞ্চম৷ গতকাল মাঠ থেকে ঘাস ফেরার সময় সে দেখে, বাড়িতে প্রচুর মানুষ৷ সেখানে উপস্থিত জেলা শিক্ষা দপ্তরের লোকজনও৷ তাঁরা এসেছেন তাকে সংবর্ধনা জানাতে৷ তখনই সে নিজের পরীক্ষার ফল জানতে পারে। পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের পোপড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রাণগোবিন্দ মণ্ডল৷ স্থানীয় পোপড়া ঈশ্বরলাল হাইস্কুলের ছাত্র৷ এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে৷ বাবা পুতুল মণ্ডল ভাগচাষি৷ নিজের জমিজায়গা কিছু নেই৷ মা নিভা মণ্ডল পেশায় কৃষিশ্রমিক৷ মণ্ডল দম্পতির চার ছেলেমেয়ে৷ বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ প্রাণগোবিন্দ আর ছোট ছেলে এখন বাড়িতে রয়েছে৷ ছোট ছেলেও এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে৷ প্রথম থেকেই ক্লাসে প্রথম হয়ে এসেছে প্রাণগোবিন্দ৷ পড়াশোনায় খুবই ভালো৷ তবে আর্থিক কারণে কোনও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে পারেনি সে৷ সংসারের সব কাজ সামলে দিনে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করত৷ পড়াশোনায় তাকে সবরকম সহযোগিতা করতেন স্কুলের শিক্ষকরা৷ গতকাল ফল বেরোলে দেখা যায়, প্রাণগোবিন্দ বাংলায় ৯৫, ইতিহাসে ১০০, শিক্ষাবিজ্ঞানে ১০০, ভূগোলে ১০০ ও সংস্কৃতে ১০০ নম্বর পেয়েছে৷
প্রাণগোবিন্দ বলে, এমন ফলে খুব ভালো লাগছে৷ রাজ্যে পঞ্চম হয়েছি৷ প্রথমে আমি নিজের ফল জানতে পারিনি৷ গতকাল মাঠ থেকে ঘাস কেটে ফেরার পর দেখি, বাড়িতে প্রচুর ভিড়৷ প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম৷ পরে জানতে পারি, আমার ফলের জন্য আমাকে সংবর্ধনা জানাতে এসেছেন সবাই৷ এই ফলের জন্য আমার দিদির কাছে আমি কৃতজ্ঞ৷ সে সবসময় আমাকে উৎসাহ জুগিয়ে এসেছে৷ সবসময় আমার পাশে থেকেছে৷ স্কুলের ভূগোল শিক্ষিকা শুক্লা চক্রবর্তী সহ অন্য শিক্ষকরাও আমাকে অসম্ভব সাহায্য করেছেন৷ বাবা-মা যেভাবে পরিশ্রম করে আমাকে পড়িয়েছেন তা কথায় বলা সম্ভব নয়৷ ভবিষ্যতে আমি আইএএস অফিসার হতে চাই৷ মানুষের জন্য কাজ করা আমার লক্ষ্য৷ আপাতত ভূগোল নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে৷ ছেলের সাফল্যে গর্বিত নিভাদেবীও৷ তিনি বলেন, যেভাবে আর্থিক অনটনের মধ্যেও সে পড়াশোনা করেছে, তা ভাবা যায় না৷ সব কাজ সামলে সে এই ফল করেছে৷ আমি ওর জন্য গর্বিত৷

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!