গঙ্গা ও ফুলহর নদীর ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি মালদহের রতুয়ার দিয়ারাবাসীর

0 0
Read Time:4 Minute, 59 Second

মালদা: প্রশাসন ও দুই সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানালেও গঙ্গা-ফুলহরের ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তিন দশকেও৷ জনপ্রতিনিধিরা এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁরা এলাকা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই বাজনা মিলিয়ে গিয়েছে৷ এদিকে প্রতি বছরই একটু একটু করে দূরত্ব কমছে গঙ্গা-ফুলহরের৷ রতুয়ার দিয়ারা এলাকায় এখন সেই দূরত্ব মেরেকেটে দুই কিলোমিটার৷ এবারও বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দুই নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে৷ কয়েকদিন ধরে তীব্র হয়েছে গঙ্গার ভাঙন৷ এলাকাবাসী বুঝতে পারছেন, আর বেশিদিন নেই৷ এখনই স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে খুব দ্রুত তাঁরা ভিটে থেকে উচ্ছেদ হবেন৷ তাই মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা একজোট হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে আন্দোলনে নামতে চলেছেন৷ বুধবার কাটাহা দিয়ারা বাসন্তী ক্লাবের উদ্যোগে এলাকার সমস্ত গ্রামের মানুষজনকে নিয়ে একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে৷ এদিন কমিটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই আন্দোলনে এলাকার সর্ব স্তরের মানুষ শামিল হবেন৷ প্রথমে প্রশাসন ও দুই সরকারের কাছে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হবে৷ তাতে কাজ না হলে আন্দোলনে স্তব্ধ করে দেওয়া হবে গোটা রতুয়া৷ তাতেও কারোর হুস না ফিরলে আগামী বিধানসভায় মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভোট বয়কট করা হবে৷ নিজেদের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে এগোতে চাইছে এলাকাবাসী।
মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাটি গঙ্গা ও ফুলহরের মধ্যে থাকা চরবিশেষ৷ স্থানীয়দের বক্তব্য, একসময় দুই নদীর মধ্যে ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব ছিল৷ কিন্তু ভাঙনে দুই নদীই পাড় কেটে একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হতে চাইছে৷ এখন দুই নদীর দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার৷ গত তিন দশক ধরে গঙ্গা ও ফুলহরের তাণ্ডবে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি৷ জলের নীচে চলে গিয়েছে অসংখ্য বাড়ি৷ ভিটে হারানো মানুষজনের অনেকেই এখন খোলা আকাশের নীচে ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করছেন৷ কেউ তাঁদের খবর রাখেনি৷ তাই এবার আন্দোলনে নামা ছাড়া গতি নেই বলেই মনে করছেন এলাকার মানুষজন৷
গঙ্গা ভাঙনে বিধ্বস্ত নয়া বিলাইমারি বাসিন্দা মহম্মদ মাইনুল হক, কাটাহা দিয়ারার বাসিন্দা কুলজ্যোতি ঘোষ সহ অনেকেই এদিন বলেন, কাটাহা দিয়ারা থেকে গঙ্গার দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়৷ দ্বারকটোলা ও গঙ্গারামটোলা গ্রাম থেকে এখন ফুলহর নদীর দূরত্ব মাত্র ২৫ মিটার৷ যে কোনও মুহূর্তে নদী ভাঙন এই এলাকার মানচিত্র পালটে দেবে৷ তখন আমরা কোথায় যাব, কেউ জানি না৷ জাফর হাজিটোলা গ্রামের সরকারি বুথটিও নদীতে তলিয়ে গিয়েছে৷ সেখানকার আইসিডিএস সেন্টারও এখন জলের তলায়৷ সেন্টারের পাশে থাকা মসজিদ ও গ্রামের প্রচুর বাড়ি ঘর এখন গঙ্গাগর্ভে৷ এত কিছু হয়েছে ও হচ্ছে, অথচ এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ এলাকায় আসেনি৷ সাংসদ, বিধায়ককেও দেখা যায়নি৷ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের কাছেই দাবি জানাচ্ছি৷ আমাদের জীবন নিয়ে দুই সরকার নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে, মরছি আমরা৷ নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে যা যা করণীয় দরকার সেটি করব।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!