অপেক্ষার আরও এক বছর
নিউজ ডেস্ক (অনামিকা নন্দী): সময় ঘনিয়ে এসেছে মা’য়ের কৈলাস যাবার। ষষ্ঠী থেকে হঠাৎই যেনো লাফ মেরে চলে এসেছি দশমীতে। মণ্ডপে মণ্ডপে শুরু হয়ে গিয়েছে মা’য়ের প্রতিমা বরণ। চলে এসেছে বিসর্জনের পালা। তবে করোনাকালে সমাবেশ কিছুটা আলাদা। কিন্তু বনেদি বাড়ির বিসর্জনের রীতিতে আসেনি কোন পরিবর্তন।
আবেগ, মনখারাপ, বিষাদ সব নিয়েই আজ মা’কে বিদায় জানানোর পালা। ফের আরও এক বছর দিন গোনার পালা। সিঁদুর খেলা, বরণ করা এসবের পাশাপাশি,”আসছে বছর আবার হবে” বলে নিজেকে শান্ত রাখার পালা। পরিস্থিতির কারণে, নিজেকে সুস্থ রাখার কারণে, এবার ঘাটতি হয়েছে আনন্দে। তবে থেমে থাকেনি বনেদি বাড়ির রীতি ও পরম্পরা। প্রথা মেনে চলছে কনকাঞ্জলি। ঐতিহ্য মেনে দেওয়া হয়েছে মা’কে বিদায়। গুনতে বসলে, কলকাতার বনেদি বাড়ির সংখ্যা কম নয়। এক একটি বাড়ির এক একটি ইতিহাস।
দেখতে গেলে, ছাতুবাবু ও লাটু বাবুর বাড়ির প্রতিমাতে লক্ষ্মী-সরস্বতীর জায়গায় পদ্মের উপর বসে থাকেন দেবী দুর্গার দুই সখী জয়া ও বিজয়া। একসময় এই বাড়িতে দশমীতে নৌকায় বিসর্জন হত প্রতিমা। দুই নৌকার মধ্যিখানে দেবীকে দোলনার মধ্যে করে নিয়ে গিয়ে, মাঝ গঙ্গায় দড়ি আলগা করে দেওয়া হতো বিসর্জন। তবে সেই রীতিতে বর্তমানে শান দেওয়া না হলেও, বজায় রয়েছে অন্যান্য রীতি।
এদিকে হাটখোলার দত্ত বাড়িতে, দশমীতে হয় না সিঁদুর খেলা। রীতি মেনে তা হয় অষ্টমীতে। এমনকি বিসর্জনের পর বাড়ির সদস্যরা দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে ফেরেন বাড়ি। বিজয়ার প্রণাম জানানোর এক অদ্ভুত রীতি রয়েছে এই বাড়িতে।
আবার শোভাবাজার রাজবাড়ির রয়েছে আরেক ইতিহাস। বর্তমানে এই রাজবাড়ির পূজো দুটো হলেও, প্রতিমা হয় একচালার। কায়স্থ রীতি মেনে, পুজোয় হয়না অন্নভোগ এবং পুজোর কাজে অংশ নেন না পরিবারের সদস্যরা। এদিকে বলি দেওয়া বন্ধ হলেও শাক্ত প্রথা মেনে নবমীতে দেওয়া হয় মাগুর মাছ বলি। এই বাড়ির রীতি আবার বন্দুকের গুলি ছোড়া।
এরকম ইতিহাসে ঘেরা বনেদি বাড়ির দুর্গা উৎসব। কোন বাড়িতে বিসর্জনের আগে পর্যন্ত জ্বালানো থাকে প্রদীপ। কোথাও আবার বিসর্জন দিয়ে এসে বাড়ির পুরুষরা তিনবার জিজ্ঞেস করেন ” মা, আছেন ঘরে ?” প্রতুত্তর না এলে ঢোকা যায় না বাড়িতে। এক বনেদি বাড়িতে বিসর্জন দিয়ে এসে, গয়লার স্ত্রীকে প্রণাম করে ঢুকতে হয় বাড়ি। রীতি, পরম্পরা, ঐতিহ্য মেনে বিদায় জানানো হয় মা’কে।
চলতি বছরে রীতি, ঐতিহ্য, পরম্পরাতে ঘাটতি না হলেও, সামাজিক দূরত্বের ওপর থাকবে কড়া নির্দেশিকা। চলতি বছরের দশমীতে হবেনা প্রতিবছরের মতো কলরব। থাকবে বিধি নিষেধ। এখন অপেক্ষা আরো একটা বছরের।