আড়ম্বর-এ করোনার থাবা
পূবালী অধিকারী: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। চলতি বছরের পরিস্থিতিতে এই তেরো পার্বণ পালনে, এসেছে কিছু বদল। মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। পড়তে হচ্ছে মাস্ক। ব্যবহার করতে হচ্ছে স্যানিটাইজার। সঙ্গে মানতে হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা। যা সরকার থেকে জারি হয়েছে সকলের জন্য। যে কারণে বাঙালির সবথেকে বড় আনন্দের উৎসবেও পড়েছে বাঁধা। চলতি বছরের শারদীয়া উৎসব পায়ে হেঁটে নয়, নেটে ভার্চুয়ালি দেখে কাঁটাতে হয়েছে সাধারণ মানুষসহ তারকাদের। তবে মা লক্ষ্মীর আবাহন আড়ম্বর পূর্ণ না হলেও, ছোট করে বাঙালির ঘরে ঘরে পালন হয়েছে তা। দেবী মহামায়া কৈলাসে পাড়ি দেওয়ার পর মর্তে আসেন দেবী লক্ষ্মী।
আশ্বিন মাসে, পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মীপূজো হয়ে থাকে। বাঙালি ও অবাঙালি নির্বিশেষে প্রত্যেকের ঘরে ধনদেবীর আরাধনা হয়।দুর্গাপূজার পরই যে পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মী পুজো হয় তাকে আমরা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বলি। এই পুজোটি মূলত পূর্ববঙ্গীয়রাই করে থাকেন। তবে এখন অনেকেই মঙ্গল কামনায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করেন। ঘরের গৃহিণীরা ঘর পরিষ্কার করে, আলপনা দিয়ে ঘর সাজিয়ে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় মগ্ন। কথায় আছে লক্ষ্মীপুজোর রাতে লক্ষ্মী পৃথিবীতে বিরাজ করে। তাই ঘরে ঘরে দীপ জ্বালিয়ে দেবীকে আবাহন করা হয়।
এ বছরটা অন্যসব বছরের তুলনায় বেশ আলাদা। করোনাকালে আমরা সকলেই প্রায়ই ঘরবন্দি। তারই মধ্যে একাকীত্ব, একঘেয়েমি কাটাতে উৎসবের জুড়ি মেলা ভার। তবে উৎসব কাটাতে হবে সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ককে সঙ্গে নিয়েই। কদিন আগেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। নিউ নরমালের দুর্গাপুজো কম বেশি উপভোগ করেছি আমরা সবাই। পালা ছিল নিউ নরমালে লক্ষ্মীপুজো পালনের।
নিউ নরমালের লক্ষ্মী পুজো ছিল বেশ অন্যরকম। জাঁকজমক অন্য বছরের তুলনায় কম হতে পারে, কিন্তু ভক্তি রসের ফাঁক ছিল না, এটা আমরা হলফ করে বলতে পারি। উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত, তারকা থেকে নেতা মন্ত্রী, লক্ষী পুজা সবার ঘরেই মাস্ট।
এত বিধিনিষেধের মধ্যেও সবাই যতটা সম্ভব,সেইভাবেই দেবী লক্ষ্মীর আবাহন করেছেন। তারওপর বাজারে যাওয়া এখন প্রায় মুশকিল। ফুল থেকে ফল কিংবা সবজি সবকিছুরই ছিল আগুন দাম। ফলে পুজোর বাজার করতে গেলে সাধারণ মধ্যবিত্তর হাতে ছ্যাকা তো লেগেছেই। একদিকে মায়ের পুজো করতে হবে অন্যদিকে পকেটও বাঁচাতে হবে। তার ওপর মায়ের জোগাড়ে যদি কিছু কমতি থেকে যায় মা আবার রুষ্ট হবেন। ফলে এ যেন শাখের করাত।
এদিকে তারকাদের লক্ষ্মী পুজো মানেই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। বাড়িতে ভর্তি অতিথি, খাওয়া-দাওয়া, জমিয়ে পুজো, গল্প, আড্ডা সবকিছু চলে। কিন্তু এবার সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই করোনা। সবকিছুর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্ব যেন এক জগদ্দল পাথর। না নিজে সরে, না তাকে টেনে সরানো যায়। ফলে করোনার ভয়ে বাড়িতে অথিতি আসা মানা।তাই এবছর তারকাদের লক্ষ্মীপুজো হয়েছে নমো নমো করে। সেলিব্রিটিদের মধ্যে অপরাজিতা আঢ্যর লক্ষ্মীপুজো বেশ বিখ্যাত। কিন্তু এবার সেখানেও বাধ সেধেছে করোনা। অভিনেত্রী নিজেই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় চলতি বছর তাঁর বাড়ির লক্ষ্মীপূজো হয়েছে আরম্বরহীন ভাবে। আবার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সিঙ্গাপুরের বাড়িতে আরাধনা করলেন মা লক্ষ্মীর। ওদিকে পল্লবী চ্যাটার্জি থেকে, ঋতাভরী থেকে কৌশানী মুখার্জী সবার বাড়িতেই এ বছর লক্ষ্মীপুজোয় চাঁদের হাসি বাঁধ ভাঙ্গে নি। একসঙ্গে ভোগ খাওয়া, অঞ্জলি দেওয়া, সাজগোজ, গল্প আড্ডা সবকিছু এবছরে বাকি থেকে গেছে।
অনেকের বাড়িতে আবার কালীপুজোর রাতেও লক্ষ্মী পুজো হয়। অমাবস্যার নিকষ অন্ধকারে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে ঘরে ঘরে পূজিত হয় দেবী লক্ষী। কালীপুজোর রাতে লক্ষ্মীপুজো কে অনেকে “অলক্ষী বিদায়” বলে।দীপাবলির রাতের লক্ষ্মীপুজো ভারতবর্ষের বহু রাজ্যেই হয়ে থাকে।
তবে আমরা কিন্তু আশাহত হবো না। আমরা জানি মা লক্ষ্মীর দয়ায় আমাদের এই খারাপ সময় নিশ্চয়ই কেটে যাবে। এবছর নাইবা হল,পরের বছর লক্ষ্মীপূজোয় আমরা জমিয়ে আনন্দ করবো।