Digha – রূপ থেকে রূপান্তর

0 0
Read Time:5 Minute, 45 Second

শাশ্বতী চ্যাটার্জি::দিঘা – ভ্রমন পিপাসু বাঙালিদের বড়ো আদরের সমুদ্র সৈকত।

ঘর থেকে সামান্য সময়ের মধ্যেই দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গের পুর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম সমুদ্র সৈকত দিঘা।সম্ভবত দীর্ঘিকা বা দিঘিলা শব্দ থেকেই দিঘা শব্দের আবির্ভাব।দিঘার আদি নাম ছিল বীরকুল।ইতিহাস বলে ওয়ারেন হেস্টিং দিঘার মনোরম সমুদ্র সৈকত দেখে মুগ্ধ হয়ে একে ‘প্রাচ্যের ব্রাইটন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
স্বাধীন ভারতে ব্রিটিশরাই দিঘা সম্পর্কে পশ্চিম বঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
আমি নিজে প্রায় ১৫ বছর ধরে আর প্রাচীনদের চোখে অন্তত ৩০–৩৫ বছরের দিঘাকে দেখেছি।
নতুন রাজ্য সরকার শপথ নেওয়ার আগে বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী,তৎকালীন বিরোধী নেত্রী বলেছিলেন,”দিঘকে গোয়া করে দেখাবো।” সত্যি দিঘা গোয়া হয়েছে কিনা সেই বিতর্কে না গিয়ে এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায় দিঘার কসমেটিক উন্নতি অনেক হয়েছে।অঙ্গ সজ্জার বিস্তর বিবর্তন ঘটেছে।রাস্তা অনেক ভালো ও চওড়া হয়েছে,সমুদ্র সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ রোড বহুদূর সম্প্রসারিত হয়েছে,সমুদ্র সংলগ্ন ছোট ছোট টালির চালা দেওয়া গুমটি ঘরগুলো সমুদ্র সৈকত থেকে অনেকটা দূরে সরে মাথায় ফাইবারের চালা দেওয়া পাকা দেওয়াল পেয়েছে।প্রচুর নতুন হোটেল হয়েছে।কলকাতা ও শহরতলি থেকে প্রচুর বাস চলাচল করছে।তৎকালীন রেলমন্ত্রীর উদ্যোগে হাওড়া থেকে দিঘা ট্রেন চালু হয়েছে।অটো, টোটো ও গাড়িতে ভরে গেছে দিঘা।
কিন্তু সব ভালোর পিছনে তো কিছু খারাপ থাকে।এখন আর রোমান্টিক বাঙালি মন ঝাউ গাছের তলায় বসে কবিতা লিখতে পারে না।কারণ নগরায়নের নামে,সৌন্দর্যায়নের নামে একটা বিশাল অংশের ঝাউবন কাটা পড়েছে।দিঘা বিচ এখন ঝাউবন শূন্য।দূরে কিছু গাছের অস্তিত্ব এখনো হয়তো আছে কিন্তু অচিরেই তা ধ্বংসের মুখ দেখতে চলেছে।পরিবেশ বিদদের তীব্র আপত্তিকে উপেক্ষা করে তথাকথিত উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে।কিন্তু এখন আর সেই রোমান্টিক গান গাওয়া হবে না -“চলো না দিঘর সৈকত ছেড়ে/ঝাউ বনের ছায়ায় ছায়ায়/শুরু হোক পথ চলা /শুরু হোক কথা বলা ।”
এ কথা ঠিক যন্ত্র সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে।হয়তো প্রকৃতিও এর জন্য ক্ষুণ্ন।তাই দিঘার পার ভাঙছে।বহু বছর ধরেই বড়ো বড়ো বোল্ডার দিয়ে সেই ভাঙন আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে।ফলে দিঘায় সেই প্ৰশস্থ শান্ত সৈকত আর নেই,আছে যন্ত্র সভ্যতার স্পর্শে শিহরিত বোল্ডারের জঙ্গল।গড়ে উঠেছে অজস্র মদের দোকান।বিকোচ্ছে অনেক।সরকারের ঘরে অনেক টাকা হয়তো হচ্ছে কিন্তু নতুন জেনারেশন আসক্ত হয়ে পড়ছে নেশায়।
দ্বিতীয় একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেই নয়,তাহলো,দিঘা-শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে যে কয়েকশো নতুন দোকান,তা বিতরণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে।কান পাতলে শোনা যায় দরিদ্র অসহায় মানুষের কয়েক লক্ষ টাকা সাইফন হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।পুঁজিবাদের নিয়ম অনুযায়ী এক শ্রেণী অনেক হারাচ্ছে আবার আরেক শ্রেণী র ভাঙা একতলা বাড়ি দোতলা,তিন তলা হয়ে যাচ্ছে।এখন আর দিঘায় শীতের সকালে কাঁধে নিয়ে কেউ খেজুরের রস বিক্রি করতে আসে না কিন্তু ফাঁকা ডাবের খোলসে বিয়ার নিয়ে বসে পড়ে নতুন প্রজন্মের একটা অংশ।
ইতিমধ্যে বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করে মাননীয় মমতা ব্যানার্জির সাধের জগন্নাথ মন্দির গড়ে উঠতে চলেছে।সেই জমিতেও দেখলাম অনেক ঝাউ বন।হ্যাঁ,এটা ঠিক যে সরকারের অর্থে কোনো মন্দির মসজিদ নির্মান কি আদপেও একটা সেকুলার সরকারের পক্ষে উচিত?সব প্রশ্নের শেষেও বলা যায় ভক্ত বাঙালি পুরীর স্বাদ পেতে চলেছে এই মন্দির নির্মাণের ফলে।
কিন্তু সব কিছুর পরেও বলবো নতুন রূপের দিঘা আধুনিকতার স্পর্শে বেশ প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!