শুরু মুখোমুখি জেরা করার প্রস্তুতি
নিউজ ডেস্ক::শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে আদালতে তোলা হয়েছিল।
সোমবার সেই মামলার শুনানি শেষে ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। ইডি উভয়কেই নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চাওয়া হয়েছে ১৪ দিন আর অর্পিতাকে ১৩ দিনের ইডি হেফাজতে চাওয়া হয়।
তবে আগামী ৩ রা অগস্ট পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১০ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, বান্ধবী অর্পিতারও ৩রা অগস্ট পর্যন্ত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে পার্থের জামিনের আবেদন।
তবে পার্থ এবং অর্পিতাকে ৪৮ ঘন্টা অন্তর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করার নির্দেশ ইডি আদালতের।
এদিকে অর্পিতার আইনজীবীদের পক্ষ থকে জামিনের আবেদন না জানানো হলেও, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। অর্পিতার আইনজীবীরা ১৩ দিনের দীর্ঘ ইডি হেফাজতের বিরোধিতা করা হয়েছে। আবেদন জানানো হয়েছে কম দিনের হেফাজতে নেওয়ার। এদিকে ইডি আবার অর্পিতার স্বাস্থ্য পরীক্ষা তাদের হেফাজতেই হোক বলে আদালতে আবেদন করেছে।
ইডি দাবি জানিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর যাতায়াতে বিপুল খরচ হয়েছে। ইডির আইনজীবীর এই দাবি মানতে চাননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী দেবাশিস রায়। তিনি বলেন, ইডির অতিরিক্ত তাড়া ছিল, তাই খরচ হয়েছে। এটা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দায় নয়। এই মর্মে এসএসকেএমের একটি রিপোর্টও শুনানি চলাকালীন পেশ করা হয়।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীদের দাবি, এসএসকেএম কী রিপোর্ট দেয় তা না জেনেই তড়িঘড়ি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে পরিকল্পনা করে। তিনি সবসময় সিবিআইকে সহযোগিতা করে এসেছেন। এমনকী সিবিআই ওনার বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারে এমনও জানিয়েছিলেন তিনি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাঙ্ক ডিটেইলস জমা করা হয়েছে আদালতে। এখন ওনাকে বেআইনিভাবে ইডি গ্রেফতার করেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিকুদ্ধে এমন কোনও অভিযোগ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করার। সেখানে ইডি অহেতুক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির হয়েছে তা প্রমাণ হয়নি এখনও, তদন্তকারীরা এমন কোনও প্রমাণ করতেও পারেনি।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেট মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভুবনেশ্বরের এইমসেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে শারীরিক পরীক্ষা করার জন্য এসএসকেএম থেকে ভুবনেশ্বর এইমসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর এইমস কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্রনিক কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতলে ভর্তি রাখার মতো গুরুতর কোনও সমস্যা নেই। ফলে তাঁকে ভর্তি রাখার প্রয়োজন নেই। তাঁকে এদিনই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এইমসের এই সিদ্ধান্তে চাপ বাড়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর।
এখানে উল্লেখ্য, শনিবার রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। তারপর ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাঁকে দুদিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে এসএসকেএমে ভর্তির আবেদন জানান। রাজ্যের মন্ত্রীর সেই আবেদন মঞ্জুর করা হলে তিনি শনিবারই এসএসকেএমে ভর্তি হন। কিন্তু আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ইডি পাল্টা হাইকোর্টে আবেদন করে রবিবার। তাঁদের অভিযোগ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থতার নাটক করছেন।
এসএসকেএমে তিনি ডনের মতো আচরণ করছেন। এরপর তাঁকে ভুবনেশ্বরের এইমসে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেই ভার্চুয়ালি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে পেশ করা হয় ইডির তরফে।