দুর্গাপূজা – দশহাতে দশ অস্ত্র
নিউজ ডেস্ক::শরৎকালে দেবী দুর্গার যে রূপ পূজিত হয় তাঁর দশহাত।এই দশহাত অস্ত্রে সজ্জিত।
পুরান মতে পৃথিবীর যে দশ দিক,সেই দশ দিক থেকেই মহিষাসুরকে আবদ্ধ করার জন্যই এই দশ হাত প্রতীকরূপে এসেছে।সাধারণভাবে দশ দিক বলতে আমরা বুঝি পূর্ব,পশ্চিম,উত্তর,দক্ষিণ, ঈশান,নৈঋত,অগ্নি,বায়ু,উর্ধ্ব ও আধ।কিন্তু পুরান মতে এই দশ দিক হলো – কুবের, যম,ইন্দ্র,বরুণ,ঈশান,বায়ু, অগ্নি,নৈঋত, ব্রহ্মা ও বিষ্ণু।
এই দশহাতে অস্ত্র সজ্জার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বিভিন্ন পূরণে।মার্কন্ড পূরণে বলা হয়েছে –
১) শঙ্খ – বরুণ দেবের দেওয়া ‘শঙ্খ’ আসলে জাগরণের প্রতীক।সমস্ত বিশ্বকে জাগিয়ে তোলার জন্য এই ধ্বনি।
২) চক্র- বিষ্ণুর দেওয়া চক্র হলো ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক।চক্র যেমন ঘোরে।তাই এই ব্রহ্মাণ্ডে একমাত্র দেবতারা ছাড়া সবাই মরণশীল।এই চক্র ব্যবহার তার জন্য।
৩) গদা – ধর্মরাজ যম প্রদত্ত গদাকে বলা হয় কালদন্ড।কালের বিনাশ আছে।তাই মহিষাসুরকে বিনাশের জন্যই এই গদা।
৪) পদ্ম – পুরণমতে পদ্ম আলোর প্রতীক।প্রজাপতি ব্রহ্মা এই পদ্ম দান করে দুর্গাকে।ছলে বলে কৌশলে যাতে মহিষাসুর অন্ধকারে পালিয়ে যেতে না পারে।পদ্মই
আলো দেবে।
৫) খড়গ – খড়গ হলো আমাদের কাম ক্রোধ ইত্যাদি ছয়টি রিপুকে ধ্বংস করে।মানুষের অন্তরের গভীরেই থাকে এই ছ’টি শত্রু।অসুরের মন থেকে সেই অসুরকে(ছ’টি রিপু) ধ্বংস করাই খড়্গের কাজ।
৬) ধনুর্বান – দেবতা পবন দেবী দুর্গাকে তির-ধনুক প্রদান করে লক্ষ্যভেদের আশীর্বাদ করেন।পুরান মতে পবন সর্বত্রগামী।তাই এই পবনের তির সমস্ত
প্ৰতিবন্ধকতা দূর কতে লক্ষ্যভেদ করবে।
৭) ঘন্টা – দেবরাজ ইন্দ্রের বহন ঐরাবত অস্ত্রটি দেবীকে দান করেন।শঙ্খ ও ঘন্টা ধ্বনি সমস্ত শুভ কাজের সূচনার প্রতীক।
৮) বজ্র – দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক এই বজ্র।দেবরাজ ইন্দ্র এই বজ্র প্রদান করে সমস্ত শুভ শক্তির মধ্যে সংহতি প্রতিষ্ঠা করেন।
৯) সর্প – সর্প বা নাগপাশ হলো বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক।নাগরাজ এই সর্প প্রদান করে বিশুদ্ধ চেতনাকে আবদ্ধ করতে চায়।
১০) ত্রিশূল – মহাদের ত্রিশূল বাহী।তিনি দেবীকে ত্রিশূল দান করেন।ত্রিশূল আসলে একদিকে স্বর্গ-মর্ত্যে-পাতাল এর প্রতীক,অন্য দিকে মানুষের ত্রিগুণ(সত্ত্ব:, রজ: ও তম:) কে নিয়ন্ত্রণ করে।
এভাবেই মহিষাসুরকে মর্দন করেছিলেন দেবী দুর্গা।