বোধন থেকে বিসর্জন – একটা পরিক্রমা
নিউজ ডেস্ক::আজ দশমী।বিকেল থেকেই ঘাটে ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের লাইন।হিন্দু বাঙালির বড়ো বিষাদের দিন।গত পাঁচদিন ধরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে হিন্দু বাঙালি মহামিলনে মেতেছিলেন।
ষষ্ঠীতে বোধন।আশ্বিনের শুক্ল পক্ষের সষ্ঠী তিথিতে বোধন হয়।বোধন আর্থ জাগরণ।এটা আসলে অকাল বোধন।রামচন্দ্র রাবণকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্যই বেল গাছের তলায় ধ্যানমগ্ন হয়ে দেবী দুর্গাকে আহ্বান করেন,জাগরিত করেন।তাই সষ্ঠী তিথিতে হলো বোধন।
মহাসপ্তমীতে মহাপুজো হয়। সূর্য ওঠার আগেই, একটি কলাগাছ পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করিয়ে, তারপর এটিকে নববধূর (কলা বউ) মতো নতুন শাড়ি পরানো হয়। এদিন নবপত্রিকা প্রবেশ । এই সপ্তমী থেকেই মূলত হিন্দু বাঙালি উৎসবে মেতে ওঠে।
অষ্টমী তিথিকে মহাষ্টমী বলা হয়।এই তিথি খুবই পবিত্র।তাই অষ্টমী তিথিতে সর্বস্তরের হিন্দু বাঙালি দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।অষ্টমী আসলে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিস্থলে সন্ধি পুজোর প্রস্তুতি।
এই সন্ধি পুজো অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরুর ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ । এই সন্ধিক্ষণে তন্ত্রমতে করা হয় ‘সন্ধিপূজা ’।
দেবী দুর্গার আপর নাম চামুন্ডা। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন । তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয় খুব পবিত্র মতে।এই সন্ধি পুজোর অপরিহার্য এবং ১০৮ টা পদ্ম ও ১০৮ টা প্রদীপ।পুরাণ মতে অষ্টমী পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াইয়ে দেবী দুর্গার দেহে ১০৮ টি ক্ষত তৈরি হয়।তখন মহাদেবের আশীর্বাদের ১০৮ টি পদ্ম সেই ক্ষত স্থানের যন্ত্রণার নিরসন ঘটায়।
নবমী নিশা বড়ো বিষন্ন করে মনকে।মহিষাসুর বধ সমাপ্ত।এবার দেবীকে ফিরতে হবে কৈলাসে।এদিন সন্ধ্যায় মহা নবমী ব্রত পালন করা হয়।
দশমী দেবীর বন্ধন মুক্ত করে দেবীকে পাঠানো হয় কৈলাসে।বার্তাবাহক নীলকন্ঠ পাখি যায় কৈলাসে আগে খবর দিতে।প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ দিনেই দেবী মর্ত্য ছেড়ে ফিরে যাবেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় থাকবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর।
প্রতিমা বিসর্জনের পরে আপামর বাঙালি পরস্পরকে আলিঙ্গন করে প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।