ভ্রমণ – মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর
নিউজ ডেস্ক: লাল মাটির বিষ্ণুপুর এখন বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত অন্যতম দর্শনীয় স্থান।ভ্রমণ পিপাসু মানুষ ও ধর্মপ্রাণ মানুষ বিষ্ণুপুর এসে শুধু মন্দির দর্শন করলেই পবিত্র মনে ফিরে যেতে পারবে।
বিষ্ণুপুর প্রাচীন মল্লরাজাদের বাসভূমি ছিল।মল্লরাজাদের রাজধানী বিষ্ণুপুর।বাঁকুড়ায় আর্কিওলগি সার্ভে ও ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বাঁকুড়ায় ৩৪ মন্দিরের মধ্যে ২০ টি মন্দির বিষ্ণুপুরে অবস্থিত।একটা অটো ভাড়া নিয়ে সারাদিন মন্দিরগুলো ঘুরে নেওয়া যায়।তবে ২ দিন সময় থাকলে ভালো করে ঘোরা যায়।
পোড়ামাটির কারুকার্য সমৃদ্ধ ওই মন্দিরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষেরা আসেন।ওই ২০ টি মন্দিরের মধ্যে ৩ টি মন্দিরে প্রবেশ করতে টিকিট কাটতে হয়।
স্থাপত্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন বিষ্ণুপুরের রাসমঞ্চ।
১) রাসমঞ্চ – ল্যাটেরাইট পাথরের নির্মিত চাতালের উপরের অংশটা পিরামিড আকৃতির।রাসপূর্ণিমায় এখানে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।অগণিত ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে।
২) পঞ্চচূড়া মন্দির বা শ্যমরাই মন্দির – এখানে শ্যাম ও রাধার মূর্তির দিকে তাকালে ভক্তদের চোখে জল চলে আসে।পাঁচটি চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরের মাঝের চূড়াটি অষ্টভুজ আকৃতির।অসাধারণ টেরাকোটার কাজ।
৩) জোড়বাংলা মন্দির – বিষ্ণুপুরের অন্যতম শিল্প সুষমা সমৃদ্ধ মন্দিরের মধ্যে এটি অন্যতম।এই মন্দিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণলীলা সহ একাধিক পৌরাণিক কাহিনী এখানে পোড়া মাটির স্থাপত্য দিয়ে ভরিয়ে তোলা হয়েছে।
এছাড়া বিষ্ণুপুরের অন্যান্য মন্দিরগুলো ধর্ম ও স্থাপত্য কলার দিক থেকে খুবই আকর্ষণীয়।প্রত্যেকটা মন্দিরের ঐতিহাসিক মূল্য অনেক।
৫) লালজি মন্দির – সমস্ত মন্দিরটির চারিদিকে ল্যাটেরাইট পাথর দিয়ে ঘেরা।ইতিহাস বলছে বীরসিংহ এই মন্দিরটি নির্মাণ করান ১৬৫৮ সালে।
৬) ক্ষুদ্র প্রবেশদ্বার মন্দির – এই মন্দিরটিও বীরসিংহ দ্বারা গঠিত।এই মন্দিরটিও পাথর দ্বারা বেষ্টিত ও এর প্রবেশদ্বার খুব ছোট।
৭) ছিন্নমস্তা মন্দির – এই মন্দির দর্শনের অতিরিক্ত লাভ হলো এর পাশেই আছে মল্ল রাজাদের সবচেয়ে বড় কামানটি।শোনা যায় বর্গি আক্রমণের বিরুদ্ধে এই কামান ব্যবহার করা হয়েছিলো।
৮) কালাচাঁদ মন্দির – সম্ভবত ১৬৫৬ সালে মল্লরাজ
রঘুনাথের সিংহের সময় উত্তর ভারতীয় স্থাপত্যের মতো করে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়।এই মন্দিরের গায়েও কৃষ্ণলীলা বর্ণিত হয়েছে।
এই আটটি মন্দির ছড়াও আছে উল্লেখযোগ্য আরো অনেক মন্দির।
যেমন – জোড় মন্দির,মদন গোপাল মন্দির,রাধা মাধব মন্দির,রাধা গোপাল মন্দির ইত্যাদি।শিল্পকলার দিক থেকে এক মন্দিরগুলোর ঐতিহাসিক মূল্য অসাধারণ।
কলকাতা থেকে সড়কপথে বিষ্ণুপুর যেতে চাইলে এস্প্ল্যানেড থেকে প্রতিদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস ছাড়ে। সময় লাগে প্রায় ৫ ঘণ্টা। নিজ্জ্বস্ব গাড়ি করে কলকাতা থেকে ডানকুনি হয়ে দুর্গাপুর ও আরামবাগ হয়ে পৌঁছনো যায়। খড়গপুর, আসানসোল, বর্ধমান থেকেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভাল।
ট্রেনে করে বিষ্ণুপুর স্টেশনে নেমেও ভিতরে আসতে পারেন।
নৈশযাপন করার জন্য বাঁকুড়ায় অনেক হোটেল লজ আছে।পুরো বিষ্ণুপুর বেড়ানোর জন্য ২ দিন সময় পেলে ভালো হয়।প্রথম দিন ১০/১১ টা মন্দির দেখে পথে লাঞ্চ সেরে নিন।দ্বিতীয় দিন বাকি মন্দির দেখে বিকেলের দিকে ট্রেন বা বাসে উঠলে রাত ৮/৯ টার মধ্যে কলকাতা পৌঁছে যাবেন।
চলুন ঘুরে আসি মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর।