তুলসীদাস বলরামের জীবনাবসানে শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
নিউজ ডেস্ক : পিকে ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামীর সঙ্গে উচ্চারিত হতো তুলসীদাস বলরামের নাম। পিকে-চুনী চলে গিয়েছিলেন আগেই। আজ জীবনাবসান হলো তুলসীদাস বলরামেরও। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। আজ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
তুলসীদাস বলরামের প্রয়াণে শোকের ছায়া বাংলা তথা ভারতের ফুটবল-মহলে। শোকাহত তাঁর অনুরাগীরা। কিংবদন্তির প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শোকবার্তায় লিখেছেন, কিংবদন্তী-প্রতিম ফুটবলার তুলসীদাস বলরামের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাঁর প্রয়াণে ইতিহাসের একটি অধ্যায় শেষ হয়ে গেল।
ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা ফুটবলার তুলসীদাস বলরাম অলিম্পিক-সহ বহু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অধিনায়কও হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি অর্জুনসহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমি তুলসীদাস বলরামের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের তিন রত্নের একজন বলরাম ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে স্মরণীয় পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ক্লাবের হয়ে ১০৪টি গোল করার পাশাপাশি অনেক ট্রফি জয়েও অবদান রেখেছেন। পিকে-চুনী-বলরামের ত্রিফলার কথা আজও ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে ফেরে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে তিনি খেলেন ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। অধিনায়কত্ব করেছিলেন ১৯৬১ সালে। ১৯৫৬ সালে যে ভারতীয় দল অলিম্পিক ফুটবল খেলেছিল, সেই দলের শেষ জীবিত সদস্য ছিলেন বলরাম।
১৯৬২ সালের এশিয়াড সোনাজয়ী ভারতীয় ফুটবল দলের নক্ষত্র ছিলেন বলরাম। সেকন্দ্রাবাদে জন্মানো এই ফুটবলারকে দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবেই গণ্য করা হয়। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে শিল্ড-জয়ী বলরাম ৬২ সালে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।২০১০ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁকে জীবনকৃতি সম্মানে সম্মানিত করে। দু’বারের অলিম্পিয়ান বলরাম ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার পর কোচিং করান বিএনআর ও কলকাতা মেয়র্স টিমকে। আজ দুপুর ২.০৫ মিনিটে মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় এসে তিনি কলকাতা ময়দানে নজরকাড়া ফুটবল উপহার দিয়েছেন। লাল হলুদ জার্সি গায়ে খেলার পাশাপাশি বাংলা তথা ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বাংলাকে বেশ কয়েকবার সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। ১৯৫৬ এবং ১৯৬০ সালে তিনি ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে অলিম্পিক গেমসে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। বাষট্টি সালে ভারত শেষ বার এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাকার্তার মাটিতে। সেবার ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা ছিল বলরামের।
ভারতীয় ফুটবলে ব্রহ্মা,বিষ্ণু, মহেশ্বর বলা হতো প্রদীপ ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামী এবং তুলসীদাস বলরাম কে। দীর্ঘদিন ধরেই নানান রোগে ভুগছিলেন। স্মৃতি হারিয়েছিলেন। বাংলার ফুটবলের বঞ্চিত নায়ক শেষদিকে উত্তরপাড়ার বাড়ি থেকে বেরোতে চাইতেন না। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তারা বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। বলরামের প্রয়াণের খবর আসা মাত্র ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।