দোলউৎসব ও হোলি – পৌরাণিক উপাখ্যান
নিউজ ডেস্ক::মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দোল পূর্ণিমা ও সোমবার (৬ মার্চ) নেড়াপোড়া – হিন্দুদের দুটি অন্যতম ধর্মীয় তথা সামাজিক উৎসব। ভারতীয় পুরান মনে এই ফাল্গুনী পূর্ণিমায় শ্রীকৃষ্ণ রাধা ও অন্যান্য গোপিনীদের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতেছিলেন। তাই বৈষ্ণবদের কাছে এই উৎসব খুবই পবিত্র। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম হয়েছিল এই পূর্ণিমার তিথিতে, তাই দোল পূর্ণিমাকে গৌরী পূর্ণিমা বলা হয়। দোল পূর্ণিমা অনেক পৌরাণিক ঘটনা।দোল পূর্ণিমার মূল আকর্ষণ আবির। এই দিনটি আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার দিন। এই দিনের পূজিত ঈশ্বর রাঁধা-কৃষ্ণ। বাঙালির দোলযাত্রাটি রাঁধা কৃষ্ণকে ঘিরেই। তাকে দোলায় বসিয়ে ওই দিনে পূজিত করা হয়। কিন্তু কেন এই দোলযাত্রা? কীভাবেই বা এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয়।
দোল সাধারণত পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয়। দোল এবং হোলি দুটি আলাদা অর্থ হলেও দুটি একই জিনিস। এর পিছনে কারণও এক। হোলি কথাটি “হোলিকা” থেকে সৃষ্ট হয়েছে। যদিও গল্পটি বেশিরভাগ মানুষেরই জানা। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ এবং দিতির ছেলে হিরণ্যকশিপুর বোন। আর হিরণ্যকশিপুরের ছেলে ছিলেন প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদ অসুরবংশে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও ছিলেন প্রভু বিষ্ণুর ভক্ত। এর জন্য তার পিতা তার উপর ক্রুদ্ধ ছিলেন। কারন সে প্রভু বিষ্ণুকে তার বাবার উপর স্থান দিয়েছিলেন। তাই তার পিতা সিধান্ত নিয়েছিলেন নিজের ছেলেকে হত্যা করবেন। সেই বিষয়ে তিনি তার বোন হোলিকার সাহায্য প্রার্থনা করলে হোলিকা তাকে সাহায্য করতে সম্মত হয়। কিন্তু কৃষ্ণের ঐকান্তিক ইচ্ছায় প্রহ্লাদের জায়গায় হোলিকার দগ্ধ হয়ে মারা যায় ফাল্গুনী পূর্ণিমার আগের দিন। তাই ওই দিনকে বলা হয় সমস্ত পাপকে ধ্বংস করার দিন।
হোলিকার এই কাহিনি চাঁচর বা হোলিকা দহন নামে পরিচিত, যা দোলের আগের দিন পালন করা হয়। অথবা যা সাধারণত নেড়াপোড়া বলে অভিহিত। নেড়াপোড়া দিন শুকনো ডালপালা, গাছের শুকনো পাতা দিয়ে বুড়ির ঘর তৈরি করা হয়। এবং হোলিকার উদ্দেশ্যে সেই ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হোলিকাদহন পালন করা হয়।
দোলযাত্রা উৎসবে যেহেতু রঙের উৎসব, তাই এই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র আবির। এই দিন সকাল সকাল আট থেকে আশি সকলে রাস্তায় একে অপরকে আবির মাখাতে নেমে পরে। আগে আবির দিয়ে খেলার প্রচলনটা বেশি ছিল কিন্তু পরে আবিরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রঙ। অবশ্য আজকাল আবার দোলের দিন আবির দিয়ে দোল খেলার রীতি ফিরে আসছে। ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণবেরা এই দিনটি খুব নিষ্ঠার সাথে পালন করে।