তিস্তা ফুলছে। ভাঙলো ব্রিজ। ধ্বংস হলো পাওয়ার হাউস
নিউজ ডেস্কঃ তিস্তার মোহময় রূপে মুগ্ধ হয় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক। এই তিস্তাই সিকিম সহ উত্তরঙ্গের হৃদয়। আর এখন সেই তিস্তার রূপ যেন এক ক্ষুধার্ত দানব। ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা চালাল সিকিমে। শান্ত নদীর এমন অশান্ত রূপ দেখল সিকিম। সিকিমের অন্যতম বৃহত্ জলবিদ্যুত্ প্রকল্প সিকিম উরজাতে বিরাট বিপর্যয়। বাঁধ ও পাওয়ার হাউসকে সংযোগকারী যে ব্রিজ ছিল সেটা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে তিস্তা। সেই ব্রিজ আর নেই। প্রবল হড়পা বাণে সম্পূর্ণ ধ্বংস হলো বাঁধ। এমন ভয়াবহ দৃশ্য সাম্প্রতিক কালে দেখেনি সিকিম, দেখেনি উত্তরবঙ্গ।
সিকিম উরজা লিমিটেডের সুনীল সারোগি বলেছিলেন,’ রাত ১২টার পরে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ভেসে গেল চুংথাংয়ের এর বাঁধ। ২০০ মিটার ব্রিজটাও ভেঙে গেল। গোটা পাওয়ার হাউস জলের তলায়।’ উত্তর সিকিমের চুংথাং ও মঙ্গনে ১২০০ মেগাওয়াট প্রজেক্ট। গত বছর থেকে এই প্রথমবার লাভের মুখ দেখছিল এই প্রকল্প। এই প্রকল্পে সিকিমের শেয়ার আছে ৬০.০৮ শতাংশ। প্রায় ২৫,০০০ কোটির প্রকল্প। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখানকার ইউনিট সফলভাবে কার্যকরী হয়েছিল। তারপরে প্রকৃতির এই প্রবল রোষ।
জানা হচ্ছে, অন্তত ৩০জনের খোঁজ মিলছে না। মঙ্গলবার রাতে অন্তত ৬টা ব্রিজ জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। আরও ধ্বংসের ও নিখোঁজের খরব আসার আশাঙ্কা। সারোগি জানিয়েছেন, রাত ১১টা ৫৮ নাগাদ আমরা আইটিবিপির কাছ থেকে খবর পাই। আমাদের টিম ড্যামের গেট খোলার জন্য যায়। গেট খোলার আগে হড়পা বাণ ধাক্কা মারল। তারা সব প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকে। ১২-১৩জন ছিলেন। পরে আইটিবিপি তাদের উদ্ধার করে রাত ২টো নাগাদ। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞাতা। তিনি আরও বলেন, আমরা পাওয়ার হাউসে যেতে পারছি না। গোটা টিম অপেক্ষা করছে। রাস্তা বন্ধ। মঙ্গনের পাওয়ার হাউজে কতটা ক্ষতি সেটাও বুঝতে পারছি না। যে ব্রিজটা দিয়ে পাওয়ার হাউজে যেতাম সেটাও ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তবে পাওয়ার হাউজের মধ্যে কেউ নেই। এটাই সৌভাগ্যের। ক্ষতির পরিমান এখনো হিসাব করা না গেলেও আনুমানিকভাবে তিনি জানিয়েছেন হাজার কোটির ক্ষতি হয়ে গেল। ড্যাম আর ব্রিজ বানতেই হাজার কোটি লেগে যাবে। এই বিপুল টাকা জোগাড় করা এখন একটা চ্যালেঞ্জ।
তিস্তার জলসীমা সম্পূর্ণভাবে এখনো বিপদসীমার উপরে যায় নি। এই মুহূর্তে বৃষ্টি বন্ধ হলে হয়তো আরও অনেক ক্ষতি আটনানো যাবে। এদিকে সিকিমের তিন জেলা মঙ্গন( উত্তর সিকিম), পাকিয়ং ও গ্যাংটক( পূর্ব সিকিম) মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে মঙ্গন। আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, যেকোনো মুহূর্তে তিস্তার জলসীমা বিপদসীমার উপর চলে যেতে পারে। উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় ও বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির সতর্কতা রয়েছে। এখন তিস্তাকে কেন্দ্র করে সিকিম ও উত্তরবঙ্গ ভয়ে কাঁপছে।