কোয়েলের বাড়ির পুজো
নিউজ ডেস্কঃ পুজোর বাদ্যি বাজল বলে! এখন থেকেই চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে মা দুর্গার আগমনীর সুর। দিকে দিকে চলছে শারদিয়ার প্রস্তুতি। পাড়ার পুজো মণ্ডপ, ক্লাব থেকে শুরু করে বনেদি বাড়ি-সব জায়গাতেই চলছে মায়ের আসার প্রস্তুতি। তিলোত্তমার বুকে প্রাচীনত্বের গন্ধ নিয়ে রয়েছে বহু বনেদি বাড়ির পুজো। ঠিক সেই রকমই এক পুজো হল মল্লিক বাড়ির দুর্গাপুজো। রঞ্জিত মল্লিক ও কোয়েল মল্লিকের বাড়ির এই দুর্গোপুজো তার নিজস্ব ঐতিহ্যে বারবার উঠে আসে চর্চায়। নায়ক-নায়িকার বাড়ির পুজো হলেও পুজোর চারদিন সাবেকিয়ানাকে সঙ্গী করে সাধারণ রঞ্জিত, কোয়েল।
চলতি বছর ১০০ বছরে পদার্পণ করবে ভবানীপুরের মল্লিকবাড়ির পুজো। শোনা যায়, নবাব হুসেন শাহর আমলে বর্ধমানের শ্রীখণ্ড গ্রামে মল্লিকদের পূর্বপুরুষ সুরথ মল্লিক প্রথম শুরু করেছিলেন এই পুজো। পরে মল্লিকরা শ্রীখণ্ড থেকে চলে যান হুগলির গুপ্তিপাড়ায়। সেখান থেকে ফের কলকাতায়। তবে ভবানীপুরের বাড়িতে দুর্গা নয়, প্রথমে পুজিত হন মা অন্নপূর্ণা। পরবর্তীকালে রাধামাধব মল্লিকের ছোট ছেলে সুরেন্দ্রমাধব মল্লিক এবং অন্যান্য ভাইদের উদ্যোগে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
প্রতিটি বনেদি বাড়ির পুজোয় নিজ বৈশিষ্ট্যে বাকিদের থেকে আলদা। তেমনই এই মল্লিক বাড়িতেও রয়েছে পুজোর বিশেষ কিছু আচার। জন্মাষ্টমীর পরের দিন কাঠামো পুজো শুরু হয় ভবানীপুরে মল্লিকবাড়ির ঠাকুর দালানে। বাড়ির কুলদেবতা শ্রীধর নারায়ণের পুজোর সঙ্গে প্রতিপদ থেকে চণ্ডীঘরে শুরু হয় চণ্ডীপুজো। সাবেকি ছাঁদের একচালা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে থাকেন দেবী। প্রতিমার চালায় থাকেন মহাদেব। ডাকের সাজে সাজিয়ে তোলা হয় দেবীকে। মায়ের সুসজ্জিতা হয় স্বর্ণ অলংকারে। এই বাড়ির রীতি অনুযায়ী দেবীর এইসব অলংকার পড়ান মহিলারা। আর পুরুষেরা অস্ত্র তুলে দেন সিংহবাহিনীর হাতে।
মল্লিকবাড়িতে বৈষ্ণবমতে চলে পুজোর উপাচার। সপ্তমীতে কলাবউ স্নান , অষ্টমীতে কুমারী পুজো, অথবা নবমীতে হোম। তবে এখানে কোনও পশুবলির প্রচলন নেই। তবে কুমারী পুজো বড় করে পালন করা হয়। পুজোয় অন্নভোগের প্রচলন নেই। চাল, ডাল, বিভিন্ন ফল, মিষ্টি এবং লুচি নৈবেদ্য ও ভোগ হিসেবে মাকে দেওয়া হয়। পুজোর ক’দিন আমিষ খাবার ঢোকে না বাড়িতে। তবে দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে জমিয়ে আমিষ রান্না হয়। যার মধ্যে অন্যতম সিগনেচার ডিস মেটে চচ্চড়ি। দশমীর রাতে এই পদ ছাড়া মল্লিকবাড়ির পুজো অসম্পূর্ণ। প্রতিমা বিসর্জন হয় আদি গঙ্গায়।