মহালয়ার শুভ্র প্রভাতে তর্পণ – পুরানের কিংবদন্তি
নিউজ ডেস্কঃ ‘মহালয়া’ আসলে পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। এইদিন বিশ্বের সমস্ত প্রাণীদের উদ্দেশ্য তর্পণ করার রীতি। এক কথায় বলা যায়, তর্পণ অর্থ সন্তুষ্ট করা।
ভগবান, ঋষি ও পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে জল নিবেদন করে তাঁদের সন্তুষ্ট করাকে তর্পণ বলা হয়। ভগবান ও পূর্বপুরুষের আত্মার নাম উচ্চারণ করে তাঁদের কাছে সুখ-শান্তি প্রার্থনা করা হয়। পিতৃ ও মাতৃ তর্পণের সময় জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা ও ত্রিপত্রী আর অন্যান্য তর্পণের সময় তিলের পরিবর্তে ধান বা যব ব্যবহার করা হয়। আর চন্দন, তিল ও যব না থাকলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পাতা দিয়ে তর্পণ করতে হয়। এর মধ্যে তিল তর্পণ মানে জল ও তিল একসঙ্গে নিয়ে পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে নিবেদন করতে হবে। পিতৃতর্পণের সময় অবশ্যই তিল ব্যবহার করতে হবে। আর তা কালো তিল হতে হবে।
ভারতীয় পুরানে এই তর্পন নিয়ে নানা কিংবদন্তি প্রচলিত। সনাতন ধর্মের ইতিহাস অনুযায়ী, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। মানুষের বিশ্বাস, এসময় পূর্বপুরুষরা পিতৃলোক ছেড়ে করে তাঁদের উত্তরপুরুষদের বাড়িতে অবস্থান করেন। পরে সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তাঁরা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। সনাতন মতে, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়। তবে অমাবস্যার দিন তিথি না থাকলেও সব পূর্বপুরুষের শ্রাদ্ধ করা হয়। যাঁরা নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে ভুলে যান, তাঁরা এই দিন শ্রাদ্ধ করতে পারেন। এই দিন গয়ায় শ্রাদ্ধ করলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়। উল্লেখ্য, গয়ায় সমগ্র পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলে। আর বাংলায় মহালয়ার দিন দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। বিশ্বাস অনুযায়ী, এইদিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন।
এই তর্পণ নিয়ে মহাভারতে কর্ণের একটি প্রচলিত কাহিনী আছে। কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করছিল। সেখানে তাঁকে সোনা ও রত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, ‘তুমি সারা জীবন সোনা দান করেছ। পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনও খাদ্য প্রদান করনি। তাই স্বর্গেও তোমাকে সোনা খেতে দেওয়া হয়েছে।’ তখন কর্ণ বলেন, ‘আমি পিতৃগণের সম্পর্কে জানতাম না। তাই ইচ্ছা করেই তাঁদের সোনা প্রদান করিনি।’ এই কথা শুনে বিষয়টির সত্যতা অনুধাবন করে কর্ণকে ১৬ দিনের জন্য ফের মর্ত্যে যাওয়ার অনুমতি দেন ইন্দ্র। তারপরই কর্ণ সেখানে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করেন। এই ১৬ দিনকেই পিতৃপক্ষ বলা হয়।