রোহিত শর্মা – ভারতীয় ক্রিকেটের এক রূপকথার নায়ক
নিউজ ডেস্কঃ রোহিত শর্মা খেতে ভালোবাসেন। তাই ভারত হেরে হেলে তাঁর উদ্দেশ্যে কটূক্তি ছুটে আসতো ‘বাডা পাও’ বা ‘পাও ভাজি’। একটু গোলগাল চেহারার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক খারাপ কথাও তাকে শুনতে হয়েছে। অথচ এই মানুষটাই বিশ্বকপে ৭টে সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। এই রেকর্ড আর কারো নেই। বিশ্বকপের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি ৬ মারার রেকর্ড তাঁরই দখলে। রহিত পৃথিবীর একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ওয়ানডেতে ৩টে ডবল সেঞ্চুরি করেছেন। আর এই রোহিত শর্মা ২০১১ সালে টিম ইন্ডিয়া থেকে বাদ পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘আমি প্রচন্ড হতাশ। এই খারাপ সময়টা আমাকে কাটিয়ে উঠতেই হবে।’
হ্যাঁ, তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে হয়। ক্রিকেট নিয়ে কথা উঠলেই আমাদের মুখে চলে আসে সচিন, সৌরভ বা বিরাটের নাম। সেই দলে রোহিত যেন কিছুটা ব্রাত্য।আজকে আমরা জানবো, একটা রূপকথার গল্প। সেই গল্পের নায়ক রোহিত শর্মা। তাঁর জন্ম ১৯৮৭ সালে নাগপুরে। তাঁর বাবা ছিলেন ছোট একটা কম্পানির কেয়ারটেকার। তাঁর একটা ছোট ভাই আছে। একটা ছোট ঘরে চারজন থাকতে খুব অসুবিধা হতো বলে রোহিত ও তার ভাইকে মুম্বাইয়ে দাদুর কাছে পাঠিয়ে দেন তার বাবা। রোহিতের বয়স তখন মাত্র দেড় বছর। মুম্বাইএ একটা সরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় রোহিতকে। মুম্বাই যে কতটা ক্রিকেট পাগল শহর তা আমরা সবাই জানি।
স্কুলে টিফিন টাইমে সবাই বেরিয়ে পড়ত ব্যাট বল হাতে ক্রিকেট খেলতে। রোহিতও এই দলে থাকত। সবার চোখে তখন সচিন বা গাভাস্কার হওয়ার স্বপ্ন। স্কুলে খেলতে খেলতে ক্রিকেটের প্রতি তার আগ্রহ। দুর্দান্ত স্পিন বল করত এই ছেলেটা। ছাত্ররা দল বেঁধে দেখতো রোহিতের স্পিন বোলিং। শনি ও রবি ছুটি থাকতো স্কুল। তখন ছোট্ট রোহিতের সঙ্গে মা বাবার দেখা হতো। তাঁরা রোহিতের খেলা সম্পর্কে কিছু জানতেন না। একদিন স্কুলে রোহিতের খেলা দেখে নেন তার কাকা। একদিন কাকা ও কয়েকজন বন্ধু চাঁদা তুলে রোহিতকে ভর্তি করে দেন একটা ছোট ক্রিকেট একাডেমিতে। এখন থেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে রোহিত শর্মার। এখানেই রোহিতের সঙ্গে আলাপ হয় কোচ দীনেশ লাভের। দীনেশ স্যারের সঙ্গে আলাপ হওয়ার আগে রোহিত ৮ বা ৯ ব্যাট করতে নামতেন। করতেন স্পিন বোলিং। দীনেশ স্যারই তাকে ওপেনার হিসাবে খেলানো শুরু করেন ও রোহিতের জন্য একটা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দেন। এই মানুষটা না থাকলে হয়তো আমরা আমাদের ‘হিটম্যান’কে কখনোই পেতাম না। ২০০৬ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলার সুযোগ পায় রোহিত।
পরের বছরই টিম ইন্ডিয়ার নীল জার্সি গায়ে তোলার সৌভাগ্য লাভ করেন তিনি। ২০০৮ সালে IPL এ চেতন শর্মা রোহিতকে দলে নেন। পরে অবশ্য মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব পরে রোহিতের উপর। এখন পর্যন্ত ৬ বার IPL জয় করেছে রোহিত শর্মার দল । তারমধ্যে ৫ বার ক্যাপ্টেন হিসাবে। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে আমাদের বিশ্বকাপ অভিযান দারুণভাবে শুরু হয়েছে। বর্তমান সারা ভারতবাসী চেয়ে আছেন রোহিতের অধিনায়কত্বের দিকে। রোহিতের নেতৃত্ব বিশ্বকপে পর পর তিনটে খেলাতেই ভারত জয় পেলো। প্রথমে আস্ট্রিলিয়া পরে আফগানিস্তান আর শনিবার পাকিস্তান। শনিবার পাকিস্তান দাঁড়াতেই পারলো না ভারতের বিপক্ষে। রোহিতও খেললেন একটা অসাধারণ ইনিংস। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে মাত্র ৩৬ বলেই এদিন নিজের কেরিয়ারের ৫৩তম ওয়ান ডে অর্ধশতরান হাঁকান রোহিত। দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছিলেন শতরানের দিকে। কিন্তু
৬৩ বলে ৮৬ রান করেই সাজঘরে ফিরতে হয় রোহিতকে। ১৩৬.৫০ স্ট্রাইক রেটে খেলা তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ছয়টি চার ও সমসংখ্যক ছক্কায়। ১৯ নভেম্বর রোহিতের হাতেই কি থাকবে বিজয়ীর ট্রাফি। এই স্বপ্ন দেখার সাহস জোগাচ্ছে রোহিতের টিম ইন্ডিয়া।
আমাদের পক্ষ থেকে রোহিত ও তার টিম ইন্ডিয়াকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।