দেবী কি মদ্যপান করেন? কেন পুজোর নৈবিদ্য হিসেবে মা কালীকে সুরা দেওয়া হয়?

1 0
Read Time:3 Minute, 59 Second

নিউজ ডেস্কঃ “জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি”- মা কালী এবং কলকাতা একে অপরের সমার্থক। সারা বাংলায় শতাধিক কালী মন্দির রয়েছে এবং সেগুলির প্রত্যেকটির সাথে অসংখ্য ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ভাল করে একটু ভাবুন তো, মা কালীকে কখনও মদ খেতে দেখেছেন? মানে, ইতিহাসে কালীর যে রূপবর্ণনা পাওয়া যায়, তার কোথাও কি মদ্যপানের উল্লেখ আছে?
শাস্ত্রে কোথাও মা কালীর পুজোর নৈবিদ্যে মদ ভোগ দেওয়ার উল্ল্যেখ নেই, এমঙ্কী মা কালী মদ খান এমনটাও কোথাও বলা নেই। তাহলে মা কালীপুজোর নৈবিদ্য হিসেবে মদ বা কারনসুধা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কীভাবে? পুরানে মা দূর্গা, দেবী সিদ্ধলক্ষ্মী সুরাপান করলেও মা কালী নৈব নৈব চ! কালী এই বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। বঙ্গে কালীর যে রূপটি পুজিত হয় তা হল দক্ষিণাকালী বা শ্যামাকালীর রূপবর্ণনা কীরকম? এই দেবী কী পান করতে অভ্যস্ত?


শক্তিদেবীর মধ্যে একমাত্র মদ খাওয়ার কথা জানা যায় দুর্গার ক্ষেত্রে। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে বলা হয়েছে সে কথা। যুদ্ধে মহিষাসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করলে দুর্গা বলেছিলেন, ‘গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম/ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ‘ অর্থাৎ ‘রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন!’ মধু কিন্তু এখানে মোটেও নিরীহ পানীয় নয়। সংস্কৃতে মদের একটি প্রতিশব্দ মধু। আবার, বেশ কিছু পুরনো পটচিত্রে দেখা যায়, দেবী সিদ্ধলক্ষ্মীও সুরাপান করছেন!
ইনি রক্তপান করেন না। খড়্গ দিযে সিদ্ধকালী আঘাত হানেন চাঁদে। সেই চাঁদ থেকে নিঃসৃত অমৃত পানে তুষ্ট হন দেবী। অন্যদিকে, চণ্ড-মুণ্ড বধের সময় দেবী কৌষিকীর ভ্রুকুটিকুটিল ললাটদেশ থেকে উৎপন্না হয়েছিলেন যে কালী, তিনিও পান করেন কেবল রক্তই। যুদ্ধে তিনি রক্তবীজ সহ অনেক অসুরবীরেরই রক্ত পান করে তাদের বলহীন করে তুলেছিলেন।
মদ-সহকারে যে তন্ত্রসিদ্ধ পুজো পদ্ধতি বঙ্গের বুকে প্রবর্তন করেছিলেন তিনি ঋষি বশিষ্ঠ। জনশ্রুতি বলে, বশিষ্ঠ হাজার হাজার বছর তপস্যা করেও সিদ্ধি অর্জন করতে পারছিলেন না। তখন তিনি বিষ্ণুর নির্দেশে রওনা দেন চীনদেশে। দেবী তারার উপাসনা পদ্ধতি আয়ত্ত করার জন্য।


সেখানে গিয়ে বশিষ্ঠ দেখেন, সেখানে পঞ্চ ম কার অর্থাৎ মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন সহকারে তন্ত্রমতে দেবী আরাধনা করা হয়। সেই সাধন পদ্ধতিই বশিষ্ঠ নিয়ে আসেন বঙ্গে। পণ্ডিতদের বক্তব্য, বৈষ্ণবদের পঞ্চগব্য অর্থাৎ দধি-দুগ্ধ-ঘৃত-গোমূত্র-গোময়ের ঠিক বিপরীতেই অবস্থান করে শাক্তদের মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!