হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদের প্রয়াণ দিবস
নিউজ ডেস্কঃ হকি খেলার কিংবদন্তি খেলোয়াড় মেজের ধ্যানচাঁদ জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯০৫ সালের ২৯ আগেস্ট। তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৭৮ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর। তিনি এমন ভারতীয় হকি দলের সদস্য ছিলেন যারা পরপর তিনটি (১৯২৮, ১৯৩২ এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ) অলিম্পিকেই বিশ্বজয়ীর জয়মাল্য (স্বর্ণপদক) লাভ করেন । তাঁর জন্ম তারিখটি ভারতে জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসাবে পালিত হয়।
ভারতীয় হকিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেবার জন্য তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ধ্যানচাঁদের হকি খেলা ছিল ছন্দোময়। তার খেলার সৌন্দর্য দেখে ইংল্যান্ডের জনসাধারণ তাকে হকির জাদুকর নামে অভিহিত করে। কেউ কেউ আবার হিউম্যান ঈল আখ্যা দেন। তিনি ক্রীড়া জীবনে চারশোরও বেশি গোল করেছেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত হন। এই পুরস্কারের থেকেও বড়ো কথা তিনি বেঁচে আছেন আপামর জনগনের মনে।
ধ্যানচাঁদ ছিলেন হকি জগতের বিস্ময়কর পুরুষ। তাঁর এক সহজাত প্রতিভা ছিল। সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে ধীরে ধীরে। ফুটবলে পেলে, ক্রিকেটে ব্র্যাডম্যানের সমকক্ষ হিসাবে হকিতে ধ্যানচাঁদকেই গণ্য করা হয়। বল তার হকিস্টিকে এতটাই আটকে যেত যে, প্রতিপক্ষ প্রায়ই সন্দেহ করত যে সে জাদুর কাঠি নিয়ে খেলছে। এমনকি হল্যান্ডেও চুম্বক সন্দেহে তার হকি স্টিকে ভাঙতে দেখা গেছে। জাপানে ধ্যানচাঁদের হকি স্টিকে যেভাবে বল লেগে থাকত, তা দেখেই বলা হত তাঁর হকি স্টিকে যেন আঠা লেগে থাকত। ধ্যানচাঁদের ছন্দোময় হকি খেলায় সকলেই বিস্ময় প্রকাশ করতেন। তার ক্রীড়া নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে জার্মানির রুডলফ হিটলারের মতো একগুঁয়ে সম্রাট তাকে জার্মানির হয়ে খেলার প্রস্তাব দেন। ধ্যানচাঁদ সবসময় ভারতের হয়েই খেলেছেন, এমনকি দেশেও রেলবিভাগের চাকরিও নেননি। সামরিক বাহিনীর মধ্যেই ধ্যানচাঁদ তার হকি খেলা সীমাবদ্ধ রাখেন।
ধ্যানচাঁদের উপস্থিতিতে পরপর ৩টি আলিম্পিকে ভারত বিজয়ী হয়ে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় হকিকে প্রথম স্থানে নিয়ে যায়।
প্রথম – ১৯২৮ আমস্টারডাম অলিম্পিক। দ্বিতীয় – ১৯৩২ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক ও তৃতীয় – ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিক। তিনি ছিলেন যথার্থ অর্থেই বিস্ময় পুরুষ।
এমন প্রতিভাধার ভারত সন্তানের শেষ জীবন কষ্টে খুবই কষ্টে। প্রবল অর্থাভাবে শেষ জীবনে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেন নি। উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে জীবনের শেষ দিনগুলি কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড়ের কাটে অর্থকষ্টে। শেষের দিকের লিভারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা চলছিল দিল্লির অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থানে। সেখানে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মূত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বৎসর। ভারত সরকার তাঁকে যোগ্য মর্যাদা দিন নি। তাঁর আরো অনেক ভালো চিকিৎসা পাওয়া উচিত ছিল।