সারা রাত আলোর রোশনাই ভারত জুড়ে – উদ্বেলিত ভারত

0 0
Read Time:6 Minute, 12 Second

নিউজ ডেস্ক ::খেলায় হার-জিৎ থাকে। কিন্তু আসল কথা খেলার ‘স্পিরিট’! আর সেখানের ভারত সেরার সেরা। একদম বর্ডার লাইনে সূর্যোকান্তের অবিশ্বাস্য ‘ক্যাচ’! উদ্বেলিত ১৪০এর ভারত। কিলার মিলার ক্রিজে। শেষ ওভারে দরকার ১৬। বোলারের নাম? হার্দিক পান্ডিয়া। পান্ডিয়ার ফুলটস বল উড়ছে তো উড়ছে। ছয়ই হবে হয়তো! আর হলে ম্যাচ আবার ঢলে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে। ফিনিশার হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিলার মিলার। ঠিক তখনই সূর্য উঠল বার্বাডোজে। ব্যাট হাতে কিছু করতে পারেননি। কিন্তু ‘আসল’ ক্যাচটা তিনিই ধরলেন। জীবনভর একটাই আক্ষেপ লালনপালন করেছেন রাহুল দ্রাবিড়। ফাইনালে উঠেও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাঁর। ২০০৩ সালের সেই হতাশা কাটেনি ঘরের মাঠে। কোচ হিসেবে শেষ স্টেশনে দাঁড়িয়ে হাসছিলেন রাহুল। সেই হাসিতে মুছে যাচ্ছিল কষ্ট। একটা টিম, একটা প্রজন্ম বিশ্বকাপ জেতায়। কপিল দেব- সুনীলগাভাসকররা পেরেছিলেন। ধোনি-সচিনরা পেরেছিলেন। রোহিত-বিরাটরা পেরেছিলেন। বিশ্বকাপ এর আগে জিতেছেন বিরাট। বিশ্বকাপ এর আগেও জিতেছেন রোহিত। কিন্তু জুটি বেঁধে এই প্রথম। কেরিয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে। খেলার উত্তেজনা যদি বলতে হয়, তাহলে পৃথিবীর অন্যতম উত্তেজনাময় ম্যাচ।

বিশ্বের সেরা ব্যাটার। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। কিন্তু গত কয়েক মাস স্রেফ সমালোচনা নিতে হয়েছে। বিশ্বকাপেও কি তার প্রভাব পড়েছিল? তাই হবে হয়তো। রানের ধারেকাছে ছিলেন না। এমনকি একটাও হাফসেঞ্চুরি নেই। সেই দুঃখ রাখবে কোথায়! চিনিয়ে দিলো জাত। ব্যাটকে প্রণাম করে যখন মাঠে নামছে তখন সকলেই দুশ্চিন্তায়। ফাইনালটা বেছে নিলেন মঞ্চ হিসেবে। হয়তো আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন। এটাই হবে তাঁর শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা। পুরস্কার নিতে উঠে বলে দিলেন, আর খেলবেন না এই ফর্ম্যাটে। 

এ বছর তিনটে ফাইনালের দুটোতেই হার। কেঁদেছে রোহিত। চিন্তায় টিম ইন্ডিয়া! দুরু দুরু বক্ষে ১৪০ আপামর ভারতীয়। এক বছরে তিনটে ফাইনাল। আগের দুটোতে হার। এ বার আর মাথা নিচু করে ফিরল না রোহিতবাহিনী। অর্শদীপ সিং কাঁদছেন। চোখ ভিজে গিয়েছে জাডেজা-বুমরা-হার্দিকদের। বিরাট যন্ত্রণার পরেই বিরাট সাফল্য, বিরাটের সাফল্য। ১৭৭ রানের লক্ষ্য। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কখনওই খুব বেশি ভাবার ফুরসত দেয় না। সাপ-লুডোর নিরন্তর খেলা যেন চলছে। এই গেল-গেল রব। এই এল-এল স্বস্তি। ৩০ বলে ৩০ রান দরকার। সহজ হিসেব। স্বপ্ন খুব কাছে। স্রেফ উইকেট রাখো, সিঙ্গলস খেলো, ম্যাচ বের করো। কে জানত, হার্দিক ব্রেক থ্রু দিয়ে যাবেন। হেনরিক ক্লাসেন তখন বিস্ফোরক, আগ্রাসী। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অক্লান্ত মেরে যাচ্ছেন ছয়। ২৭ বলে ৫২ করে ফেলেছেন। কিন্তু হার্দিক তো আছে।

রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। হঠাৎ ভারত জুড়ে শুধু আলোর রোশনাই আর শব্দ বাজি। ভারত টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৭৬-৭ তুলেছিল। সারা বিশ্বকাপে নিরাশ করেছেন বিরাট কোহলি। কিন্তু ফাইনালের মঞ্চে তিনিই নায়ক। রোহিত শর্মা (৯), ঋষভ পন্থ (০), সূর্যকুমার যাদব (৩) পর পর ফিরে যান। কিন্তু বিরাটকে টলানো যায়নি। যেন ফাইনালই বেছে নিয়েছিলেন দিল্লির ছেলে ফর্মে ফেরার জন্য। দুরন্ত ইনিংস খেলে গেলেন। ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে গেলেন। ফাইনালেই এ বারের বিশ্বকাপের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ৬টা চার ও ২টো ছয় দিয়ে সাজালেন ইনিংস। বিরাটের সঙ্গে অক্ষর প্যাটেলের পার্টনারশিপটাই টিমকে বড় রানে পৌঁছে দিল। অক্ষর - ৩১ বলে ৪৭ করে গেলেন। চাপের মুখে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছিলেন। ১টা চার মেরেছেন ঠিকই, কিন্তু ব্যাট থেকে বেরিয়েছে ৪টে নিখুঁত ছয়। ১৭৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে প্রায় জিতেই যাচ্ছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু ওই যে, ঠোঁট আর কাপের ফারাকটা আজও মেটাতে পারলেন না। ক্লাসেন, ডি’কক খেললেন বটে, কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। ৭ রানে ফাইনাল হেরে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর, শুভেচ্ছা সারা ভারতের।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!