অসম্ভবকে সম্ভব করার নাম আব্দুল কালাম
নিউজ ডেস্ক ::
স্টেশনে কাগজ বেচা ছোট্ট ছেলেটা, মাত্র ৮ বছরের ছেলেটা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তামিলনাড়ুর একটি রেলওয়ে স্টেশনে। হাতে এক বান্ডিল খবরের কাগজ। প্রথমে সাধারণ যাত্রী, তারপর বরাত পাওয়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাগজ বিলি করা, এই হল তার প্রতিদিনের কাজ।
দারিদ্রতা নিত্যসঙ্গী ছেলেটার সংসারে। বাবা সামান্য একজন জেলে, তাঁর একার টাকায় ঘর চালানো অসম্ভব, সে কথা এতো ছোট বয়সেই উপলব্ধি করতে পেরেছে ছেলেটি। তাই বাবার কিছুটা সুরাহা করতেই কাগজ বিলির কাজ করা।
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ১৯৩১ সালে জন্ম হয় ছেলেটির। পরিবারে ৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট এই ছেলের শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। তবে বাড়িতে এমন পরিবেশ ও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেও প্রথম থেকেই লেখাপড়া করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে? সেই কারণে রোজ ভোর ৪টের সময় ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কিছু কাজ মিটিয়ে পড়তে যেতে হত তাকে। ফিরে এসে প্রতিদিন রামেশ্বরম রেলস্টেশন এবং তার লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে খবরের কাগজ বিক্রি করে যা রোজগার হট তা দিয়েই চলত স্কুল আর পড়ার খরচ।
এভাবেই কাটছিল দিন। ছেলেটা একটু বড় হয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। একদিন ক্লাসে শিক্ষক জিজ্ঞেস করেন পাখি কীভাবে ওড়ে? কিন্তু সে উত্তর কেউ দিতে পারেনি। এরপর সমুদ্রের ধারে ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে উড়ন্ত পাখি দেখিয়ে তাদের পাখিদের শরীরের গঠন ব্যাখ্যা করেন শিক্ষক। তখন থেকেই সেই ছেলের আকাশে ওড়ার স্বপ্ন শুরু। বড় হয়ে পাইলট হতে চেয়েছিল ছেলেটি। কিন্তু তখন কেই বা জানত, নিয়তি তার জন্য অন্যকিছু লিখে রেখেছে। রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফস কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক অর্জন করে ১৯৫৫ সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে তিনি বিমানপ্রযুক্তি শিক্ষায় ভর্তি হয় সেই ছোট্ট ছেলেটি। গোটা বিশ্ব এই ছেলেকেই এ পি জে আব্দুল কালাম নাম চেনে।
এরপরের গল্পটা কিছুটা স্বপ্নের মত। ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করা থেকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় মাস্টার মাইন্ড হয়ে ওঠা, সবই অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন ডক্টর এ পি জে আব্দুল কালাম। সালটা ছিল ২০০২, ভারতের বুকে ইতিহাস লিখে দেশের ১১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আব্দুল কালাম। তামিলনাড়ুর এক জেলে পট্টি থেকে দেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে রাইসিনা হিলের সবথেকে বড় প্রাসাদের বাসিন্দা হন তিনি। ফেল করে হতাশ হয়ো না। ইংরেজি শব্দ ফেল ‘Fail’ মানে ‘First Attempt in Learning’ অর্থাৎ ‘শেখার প্রথম ধাপ’। বিফলতাই তোমাকে সফল হবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে। কালাম সাহেবের এই অমোঘ বাণী আজীবন দেশবাসীকে এগিয়ে চলার শিক্ষা দেয়। ইচ্ছা, সততা আর অধ্যাবসায় থাকলে মানুষ সব করতে পারে, এই কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয় ডক্টর এ পি যে আব্দুল কালামের গলি থেকে রাজপথে পৌঁছানোর জীবনী।