বনেদি বাড়ির পরম্পরায় ‘অঞ্জলি’
নিউজ ডেস্ক: দুর্গাপূজার সঙ্গে বাঙালি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সারাবছর ধরে এই দিনের আশায় বসে থাকে বাঙালি। শহর সেজে ওঠে আলোর রোশনাইতে। বাঁশ পরে পাড়ার মোড়ে মোড়ে। অন্যদিকে বনেদি বাড়ি সেজে ওঠে এক অন্যরূপে। যে বাড়িতে সবসময় হইচই না পড়লেও, পুজোর মাসে দেশ-বিদেশ থেকে ছেলেমেয়েরা চলে আসে নিজেদের ঘরে। দেবীর আগমন থেকে বিদায় সমস্ত কিছুতে অংশ নেয় বাড়ির ছেলে মেয়েরা। ঠাকুরদালান ভরে যায় আলপনায়, ফুল আর আলোর রোশনাইতে সেজে ওঠে গোটা বাড়ি। সমস্ত অনুষ্ঠান বজায় রেখে হয় পুজো। অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে সবথেকে বড় রীতি হল ‘অঞ্জলি’। যা না হলে পুজো প্রায় অসম্পূর্ণ।
‘অঞ্জলি’ সবথেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে দুর্গাপুজোয়। ‘অঞ্জলি’র সঙ্গে জড়িত থাকে ভোগের রীতিও। ‘অঞ্জলি’র সঙ্গে কোনদিন দেবীকে দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ নিবেদন, আবার কোনদিন ক্ষীর-সন্দেশ, অষ্টমীতে থাকে ঘিয়ের লুচি। পুঁইশাক ও থোড়ের মতো নিরামিষ পদের ভোগোও থাকে কোনো কোনো দিন। সবমিলিয়ে ‘অঞ্জলি’র সঙ্গে ভোগের মিলন প্রতিদিনের পুজোয় সৃষ্টি করে এক মনোরম পরিবেশের।
বিভিন্ন বনেদি বাড়ির মধ্যে, সেনবাড়ির পুজোতে ঠাকুরদালানের সঙ্গে থাকে রান্নাঘর। পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে করে কাজ। সেই বাড়ির রীতি অনুযায়ী প্রথমে ‘অঞ্জলি’ হতো পুজোয়। তবে বাঁধা আসলে তা বন্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র ভোগ নিবেদন করা হয় সেই বাড়ির পুজোতে।
অন্যদিকে আবার বৈদ্যপুর নন্দীবাড়ির পুজোতে ‘অঞ্জলি’র সঙ্গে অষ্টমীর দিন সকলকে খাওয়ানো হয় ঘিয়ের লুচি আর সন্দেশ। সেই বাড়ির রীতি অনুযায়ী হয়ে আসছে এই প্রথা।
শ্রীরামপুরের গোস্বামী বাড়ির পুজো দেখতে গেলে, সেখানে সপ্তমীতে কলাবউ স্নান, ‘অষ্টমী’র অঞ্জলি, সন্ধিপুজো,কুমারী পুজো, নবমীতে খাওয়ানো সবই হয়। সেখানে ‘অঞ্জলি’র সঙ্গে একটা অদ্ভুত রীতি রয়েছে। রীতি হলো মা’কে বিদায় জানানোর আগে খাওয়ানো হয় মাছ ভাত।
কোনো কোনো বনেদি বাড়িতে অঞ্জলির সময় হয় ধুনুচি নাচ, কোনো কোনো বনেদি বাড়িতে আবার ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত হয় ‘অঞ্জলি’। উপোস করে ‘অঞ্জলি’ দিয়ে প্রসাদ খাওয়ার নিয়ম রয়েছে কোনো কোনো বাড়িতে। সাধারণত যেখানে অষ্টমীর দিনে ‘অঞ্জলি’ দেয় সকলে, সেখানে পুজোর পাঁচদিন ‘অঞ্জলি’ দেয় অনেকেই।
কলকাতার বিখ্যাত রাজবাড়ি শোভাবাজারে বৈষ্ণবী হিসেবে পূজা করা হয় দেবীকে। যেখানে অষ্টমী ও নবমী ‘অঞ্জলি’ দিয়ে ভোগ খাওয়ার রীতি রয়েছে। এমনই বনেদি বাড়ি গুলোতে ‘অঞ্জলি’র সঙ্গে সঙ্গে ভোগ প্রসাদের রীতি জড়িয়ে রয়েছে। যা’তে গা ভাসিয়েছে বনেদি বাড়ির সকলেই।